‘আলোর মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় বললেন বক্তারা

Looks like you've blocked notifications!
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার প্রেরক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘আলোর মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন। ছবি : এনটিভি

অভিভাবকের অধিক প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে টানাপড়েন, শিক্ষাজীবনে অস্থিরতা ইত্যাদি নানা কারণে শিক্ষার্থীদের হতাশা দানা বাঁধছে। প্রয়োজনীয় শুশ্রূষা ও মনোযোগের অভাবে এই হতাশা তাদের পরিচালিত করছে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ দিকে। সে বিষয়ে সচেতন করতে প্রেরক ফাউন্ডেশন শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করে আত্মহত্যা প্রতিরোধকমূলক আয়োজন ‘আলোর মুখোমুখি’। অনুষ্ঠানে বক্তারা আত্মহত্যার ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ করণীয় নিয়ে কথা বলেন। বিকেল তিনটার দিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন, প্রক্টর প্রফেসর ড. মীর মো. মোজাম্মেল হক, ডেইলি স্টার পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ, কবি ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন, লেখক ও গবেষক ফয়সাল আহমেদ, প্রেরক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শফিক আহমেদ ভুইয়া এবং পেরেন্টস এজিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের।

প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নিজেকে কেন হত্যা করবো। মানুষের কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজেকে শেষ করে দেওয়া উচিত নয়। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। প্রেরক ফাউন্ডেশন খুব ভালো কাজ করছে তাদের কাজ প্রশংসনীয়। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার চিত্র তুলে ধরেন।

ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেন, একটি সমাজ নানাভাবে সংকট মোকাবিলা করে। সেই সমাজের প্রভাব পড়ে তরুণ প্রজন্মের ওপর। তার থেকে প্রজন্মের মুক্তি দরকার। মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের জীবনেও অনেক ব্যথা দুঃখ ছিল কিন্তু তারা জীবনের নিয়ম থেকে বিদায় নেননি। তারা সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজ করে গেছেন। সমাজের অবহেলা পেয়েও কালজয়ী হয়েছেন। আমরা তাদের জীবনের গল্প খেয়াল করলে প্রেরণা পাব।

ইমরান মাহফুজ বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে নিতে হলে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তার জন্য তারুণ্যের প্রতি সমাজের আন্তরিকতা প্রয়োজন। সুতরাং আত্মহত্যা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের করা উচিৎ। তাহলে তারা এগিয়ে যাবার প্রেরণা খুঁজে পাবে।

প্রেরকের অভিনব কাজের প্রশংসা করে ফয়সাল আহমেদ বলেন, জীবনের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে বাঁচার প্রেরণা দিতে হবে আমাদের।

আত্মহত্যাকারীদের একটি বড় অংশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে। এর পরিমাণ ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব নিরসনের উপায় নিয়ে কথা বলেন পেরেন্টস এজিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের।

প্রেরক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শফিক আহমেদ ভুইয়া বলেন, তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে, আর এ ক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। সেই ভাবনা নিয়েই- একঝাঁক উদ্যমী তরুণ ও সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষের মানসিক উন্নয়নকে ঘিরে কাজ করে যাচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রেরক ফাউন্ডেশন।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রধান বাধা হলো সামাজিক সচেতনতার অভাব ও আত্মহত্যা সচেতনতায় উন্মুক্ত আলোচনার অভাব এবং এ বিষয়ে সঠিক তথ্য ও পর্যালোচনার অভাব। আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম, যা মারাত্মকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অধিকতর সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রেরক ফাউন্ডেশন।