রমজানে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন
রমজানে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একদল অভিভাবক। আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘সচেতন অভিভাবক মহল’-এর ব্যানারে এই মানববন্ধনে অংশ নেন তারা।
অভিভাবকরা স্কুলের বার্ষিক ছুটির তালিকায় পরিবর্তন এনে ১০ বা ১৫ রোজা পর্যন্ত স্কুল খোলার রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অভিভাবকরা তারা বলেন, বছরের শুরুতে স্কুল ছুটির তালিকায় পুরো রমজান মাসকে ছুটি আওতায় রাখা হয়েছিল। বিষয়টিতে আমরা খুবই আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে, আমাদের সন্তানরা রমজান মাসে ঠিকমতো সিয়াম সাধনা করতে পারবে। কিন্তু, কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই ছুটি বাতিল করে বলা হলো, রমজানে স্কুল খোলা থাকবে। সিয়াম সাধনার মাসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মারাত্মক হতাশ করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রোজাদার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মারাত্মক কষ্টের সম্মুক্ষিণ হবেন, আর রোজাদারকে কষ্ট দেয়া চরম অমানবিকতা।
অভিভাবক মুহম্মদ জাইদুল ইসলাম বলেন, আমি আমার সন্তানদের ছোট বেলা থেকেই রোজা রাখতে উৎসাহিত করি। কারণ রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নৈতিক গুণাবলী তৈরি হয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সন্তানদের চরিত্র গঠন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময় সন্তানদের নৈতিকতা চর্চার সুযোগ করে দেওয়া খুব দরকার।
মুহম্মদ জাইদুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা বাচ্চাদের পড়ালেখা করিয়ে বিদ্যান করছি ঠিক, কিন্তু সজ্জন বা চরিত্রবান করতে পারছি না। ফলে তারা বিদ্যান হলেও এখন দুর্জন বা চরিত্রহীন থাকছে। আর বিদ্যান দুর্জন হলেও পরিত্যাজ্য। নতুন প্রজন্ম রমজানে ক্লাস খুলে যতই পড়াখেলা করুক, তাদের নৈতিক চরিত্র যদি উন্নত না হয়, তবে তাদের দিয়ে দেশ ও জাতি কোনো উপকার পাবে না।
অভিভাবক মুহম্মদ ফারুক বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেককে বলতে শুনি, নতুন প্রজন্ম নাকি অসুস্থ প্রজন্ম হয়ে বেড়ে উঠছে। কথাটা ভুল না। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা চর্চায় বাধা দেওয়া অসুস্থ প্রজন্ম তৈরির মূল কারণ।’
অভিভাবক মুহম্মদ পাভেল বলেন, আসন্ন রমজানে মাদ্রাসা বা কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মাসজুড়ে বন্ধ থাকবে, কিন্তু প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুলগুলো খোলা থাকবে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, মাদ্রাসা আর কারিগরী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই কি শুধু মুসলমান? রমজানে তারাই কি শুধু ছুটি পাবে? তিনি আরও বলেন, করোনার সময় দুই বছর সব বন্ধ রাখায় কোন সমস্যা হয় না, কিন্তু রোজার ১০ থেকে ১৫ দিন ক্লাস বন্ধ রাখলে পড়ালেখার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে, এমন যুক্তি কখনই গ্রহণযোগ্য না।
অভিভাবক মুহম্মদ হাবীবুর রহমান বলেন, যে বা যারাই রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখতে চায়, তারা কখনই শিক্ষার্থীদের ভালো চায় না। তারা চায় না, নতুন প্রজন্ম নীতি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে উঠুক, বরং তারা চায় আমাদের সন্তানরা নীতি-নৈতিকতা বর্জিত হয়ে ইহকাল-পরকাল দুই কালেই ধ্বংস হয়ে যাক। রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা কখনই ভালো চিন্তা থেকে আসতে পারে না। রমজান মাসে তাই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হোক, এটাই একজন অভিভাবক হিসেবে আমার দাবি।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক মুহম্মদ রেজাউল করিম, মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম, মুহম্মদ আবু সায়েম প্রমুখ।