সহিংসতা হচ্ছে সামান্যতম কয়েকটা পকেটে : সিইসি
স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো তেমন কোনো সহিংসতা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আজ সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচনের আগে-পরে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সব মৃত্যু নির্বাচনি সহিংসতায় পড়ে কিনা তা তদন্তের দাবি রাখে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনের পর কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যকে অশালীন বলেও মনে করেন তিনি।
এ বছরের জুন থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশ। আর প্রতিটি চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে গড়ে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তৃতীয় ধাপে দেশের এক হাজার সাতটি ইউপি ও ১০ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি ও তিনটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে সেই প্রসঙ্গও।
সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘এর (সহিংসতা) পেছনে ছিল নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তার, বংশীয় প্রভাব, ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক কোন্দল ইত্যাদি। তবে এসব প্রাণহানির ঘটনার সবগুলো নির্বাচনি সংঘর্ষের কারণে হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে।’
পুলিশ কি আপনাদের কথা শুনছে না বা কাজ করছে না? কেন? বিষয়টা কেমন? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সহিংসতা তো হচ্ছে না সে রকম। সহিংসতা হচ্ছে সামান্যতম কয়েকটা পকেটে। রাত ৩টার সময় একটা বাড়িতে গিয়ে হামলা করে, যদি হতাহতের ঘটনা ঘটে, ইট ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট ফর পুলিশ টু কন্ট্রোল। এটা আসলেই তো সম্ভব না।’
সহিংসতা ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো বৈঠক না করলেও, বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কে এম নূরুল হুদা। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এখন পর্যন্ত খবর আসা হতাহতের ঘটনা নিয়ে কমিশন কোনো তদন্ত করবে কিনা?
সিইসি বলেন, ‘সহিংস ঘটনার তদন্ত করার আমাদের কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট নেই। এ জন্য আমরা পারি না। এ জন্য রয়েছে থানা পুলিশ, আদালত। কোনো অকারেন্স ঘটলেই আমরা শ্যুট অর সাইট কি করতে পারি? কেউ পারি না। দেখলাম, গুলি করে মেরে ফেললাম, এটা তো হয় না। অনেক উদাহরণ তো আপনাদের কাছে আছে। আমেরিকার হোয়াইট হাউজে কী হলো? পৃথিবীর সব গণমাধ্যম সেটা দেখেছে। সাথে সাথে কি বিচার করা গেছে? তদন্তই হয় নাই এখন পর্যন্ত।’
‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের কোনো কিছু বলার নাই। আমাদের হলো সরকার পার্লামেন্টের মাধ্যমে যে আইনি কাঠামো তৈরি করে আমাদের কাছে দেয়, সেই আইনি কাঠামোর ভেতরে আমাদের কাজ করা।’ যোগ করেন কে এম নূরুল হুদা।
প্রতিবার নির্বাচনের পরপর কমিশনার মাহবুব তালুকদার গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দেন তা কমিশন সমর্থন করে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘কেমন করেন, কী কারণে, এটা ওনারে আমরা জিজ্ঞাসাও করি না। বা আমরা তাঁর কাছে জানতেও চাই না। যে সমস্ত কথাগুলো ব্যবহার করেছেন এগুলো শালীনতা বহির্ভূত কথা।’
সবশেষ গতকাল রোববার নির্বাচন এখন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফসাপোর্টে বলে ‘আমার কথা’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মাহবুব তালুকদার।
এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন সভা বসলে হোমওয়ার্ক করে বসেন, প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। সব সদস্য কন্ট্রিবিউট করেন, প্রতিটি মিটিংয়ে চিন্তাভাবনা করে যান তারা। মাহবুব সাহেব কোনো চিন্তাভাবনা করেন না। উনি সাত-আট দিন পর্যন্ত একটা শব্দ চয়নে সময় ব্যয় করেন। কোন শব্দটা দিলে আপনার এরকম বলবেন, প্রশ্ন করবেন- আইসিইউ, লাইফসাপোর্ট। এই শব্দগুলো অনেক ঘেঁটে ঘেঁটে তারপরে এভাবে ছেড়ে দেন। এটা পাঁচ বছর ধরে দেখেছি।
মাহবুব তালুকদারের বারবার এই ধরনের আত্মসমালোচনায় কিছুটা ‘বিরক্ত’ প্রকাশ করেন কে এম নূরুল হুদা। সেই সঙ্গে সাংবিধানিক সংস্থাটির এই সদস্য নিয়ে অসহায়ত্বও প্রকাশ পায় সিইসির ভঙ্গিতে।
প্রথম থেকে এই ধরনের কথা বলে যাচ্ছেন উল্লেখ করেন সিইসি বলেন, ‘উনি উনার মতো বলেন, আমাদের করার কিছু নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন।