বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশের রূপকথা

রূপকথার নাম শুনেছ? আরে যা ভাবছ তা নয়, এই রূপকথা কোনো গল্পের রূপকথা নয়। এই রূপকথা হচ্ছে এক বালকের নাম। তার পুরো নাম হচ্ছে ওয়াশিক ফারহান রূপকথা। রূপকথার বয়স মাত্র নয় বছর, বাড়ি ঢাকার গুলশানে। সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ নাম লেখানোর তালিকাতেও উঠে আসে রূপকথার নাম।
কেন তাকে নিয়ে এই মাতামাতি? বলছি- কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে তো তোমরা জানোই। প্রোগ্রাম হচ্ছে কম্পিউটারের প্রাণ। যেভাবে প্রোগ্রাম সেট করা থাকে, কম্পিউটার সেভাবেই কাজ করে। মাত্র সাত বছর বয়সেই প্রোগ্রামিংয়ের কাজ খুব সহজেই করতে পারে রূপকথা। অল্প বয়সেই এই বিস্ময় বালক কারো থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে শিখে ফেলেছে কম্পিউটারের খুঁটিনাটি অনেক কিছু। এই বয়সে যখন একটা ছেলে প্লাস্টিকের খেলনা কিংবা পুতুল নিয়ে খেলায় ব্যস্ত থাকে, তখন বিস্ময়করভাবে রূপকথা হয়ে উঠেছে একজন খুদে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড (দ্রুতগতিতে কম্পোজ), পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্ল্যাশ প্রভৃতিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। এগুলো কত কঠিন, তা বড়দের কাছে জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবে। কম্পিউটার পরিচালনায় তার মতো দক্ষ ছেলের নজির পৃথিবীতে খুব কমই আছে।
রূপকথা নামের এই বিস্ময় বালকের জন্ম ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানে। জন্মের পর ওর বয়স যখন মাত্র কয়েক দিন, তখন নাকি সে পিসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। মাত্র সাত মাস বয়স থেকেই রূপকথা তার বাবার পিসিতে মাউস নিয়ে কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু করে। তার বয়স যখন এক বছর, তখন তাকে কিছু খাওয়াতে চাইলে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। প্রথমে পিসি অন করতে হতো, এর পর সে তার সামনে বসে খাওয়া শুরু করত। মাত্র দুই বছরের মাথায় সে এমএস ওয়ার্ডে টাইপিং শুরু করে। তাকে খাবার খাওয়ানো হতো পিসির সামনে বসিয়ে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ছবি দেখিয়ে। রূপকথার মায়ের নাম সিনথিয়া ফারহিন রিসা। ছোট্ট ছেলের আবদার মেটাতে মা সবকিছুই করেছেন বিনা ক্লান্তিতে। সেই রূপকথা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, আর বাড়তে থাকে তার কম্পিউটার দক্ষতা, তাও আবার কারো সাহায্য কিংবা প্রশিক্ষণ ছাড়াই! তার মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, এই বিস্ময় বালক প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার বেশি কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে এবং গেমের ক্যারেক্টর কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা জানার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, এ বয়সেই সে শিখে ফেলেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, প্রজেক্ট টুল তৈরি, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের মতো অনেক জটিল কাজ। বর্তমানে দিনের ১২ ঘণ্টাই কাটে তার কম্পিউটারের সঙ্গে।
রূপকথা তার হাতের ছোট আঙুল দিয়ে না দেখে এত স্পিডে টাইপ করতে পারে যে বিশ্বাস করাই কঠিন। টাইপিং তার কাছে খুব সাধারণ একটি বিষয়। এরই মধ্যে উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্ল্যাশ প্রভৃতিতে বেশ পারদর্শী হয়ে গেছে। এমএস ওয়ার্ডের ফাইল তৈরি, টেক্সট ডিজাইন, পিকচার অ্যাড, গ্রাফ ও টেবিল ওয়ার্ক, এক্সেল দিয়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ, পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে পিকচার মুভিং অ্যানিমেশন, স্লাইড শো, সাউন্ড ও মিউজিক অ্যাডের কাজ তার কাছে কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ফটোশপে যেকোনো ছবি এডিট করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে। তথ্য পরিবর্তন করে একটি গেমসের চরিত্রকে আরেকটি গেমসে ঢুকিয়ে দিতে পারে অবলীলায়। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন গেমিং সফটওয়্যার সে নিজে ডাউনলোড করে নিজেই ইনস্টল করে। একইভাবে সিডি থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও গেমস সে নিজে নিজেই পিসিতে ইনস্টল করে। হার্ডওয়্যার বিষয়েও তার ভালো জ্ঞান আছে। প্রিন্স অব পার্সিয়া, টার্মিনেটর থ্রি, এজ অব মিথলজি, এজ অব এম্পায়ারসহ সাতশর অধিক জটিল কম্পিউটার গেমস সে এরই মধ্যে খেলেছে। কী তাজ্জব কারবার, তাই না? শুধু তাই নয়, রূপকথা নিজেই এখন কম্পিউটার তৈরি করতে চায়। তার মা বলেন, রূপকথা সব নিজে নিজেই শিখেছে। কম্পিউটার নিয়ে এখানেই রূপকথার শেষ নয়। ফোল্ডার ম্যানেজমেন্টেও তার রয়েছে অসম্ভব দক্ষতা।
এতসব কীর্তির স্বীকৃতিও পেয়েছে রূপকথা। বিশ্বের শীর্ষ গণমাধ্যমে রূপকথার সচিত্র সংবাদ ছেপেছে এবং আন্তর্জাতিক বোদ্ধা মহলে ভালো করেই জায়গা করে নিয়েছে। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে অভিহিত করে রূপকথাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিবিসি, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, এস্টেট নিউজ, চিলড্রেন পোস্ট, হিন্দুস্তান টাইমসসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও অনলাইন। এতসব অনন্য কার্যকলাপের মাধ্যমে রূপকথা যেমন বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে, তেমনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সত্যিকারের রূপকথা হিসেবে।