ঘুড়ির কথা

শৈশবের অনেকটা সময়ই আমার কেটেছে ঘুড়ি উড়িয়ে। কতটা দুপুর, কতটা বিকেল যে নাটাই হাতে ছুটেছি ঘুড়ির পিছে। লাল ঘুড়ি, নীল ঘুড়ি, হলুদ ঘুড়ি, আরো কত রকমের ঘুড়ি যে উড়িয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কোনো ঘুড়ির ছিল লম্বা লেজ, দেখতে অনেকটা সাপের মতো। আকাশে যখন উড়িয়ে দিতাম মনে হতো সাপ উড়ছে, তাই সেগুলোকে ডাকতাম সাপা বলে। আরো অনেক রকমের ঘুড়ি ছিল, কোনোটা পাখির মতো, কোনোটা বিমানের মতো, কোনোটা আবার ছিল বাক্সের মতো।
এক প্রকারের ঘুড়ি ছিল, চং চং শব্দ করত, শোনা যেত অনেক দূর থেকে। সেগুলোকে ডাকতাম চং বলেই। এখনো আকাশের দিকে তাকালেই মনে পড়ে যায় সেই সব ঘুড়ির কথা, নাটাই হাতে তেপান্তরের পানে ছুটে চলা বিকেলের কথা। তোমরাও নিশ্চয়ই ঘুড়ি ওড়াও, লাল ঘুড়ি, নীল ঘুড়ি, হলুদ ঘুড়ি, সাপের মতো ঘুড়ি, কিংবা পাখির মতো ঘুড়ি? হয়তো ওড়াও কিংবা ওড়াওনা, ঘুড়ির প্রতি ভালো লাগা নিশ্চয়ই আছে? এই ঘুড়ি কীভাবে আবিষ্কৃত হলো সেই প্রশ্ন কি জেগেছে কখনো? দাঁড়াও তোমাদের বলছি ঘুড়ি বানানোর গল্প। ঘুড়ির সঠিক ইতিহাস অবশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি, কেমনে পাবে বলো? সেই কত আগের কথা! কবে, কোথায় প্রথম ঘুড়ি তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে আছে ঢাউস বিতর্ক, কেউ বলে চীনে, কেউ বলে গ্রিসে! তবে চীনের কথাটাই বিশেষজ্ঞরা বেশি বলেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চীনা দার্শনিক মোজি ও লু বান প্রথম ঘুড়ি আবিষ্কার করেন।
আবার অনেকে বলেন, এক চীনা ব্যক্তি নাকি তাঁর মাথার টুপির সঙ্গে সুতো বেঁধে নিয়েছিলেন, যেন সেটি উড়ে না যায়। হয়তো এখান থেকেই ঘুড়ি তৈরির ধারণা আসে। চীনা লোকটির কাণ্ডটি ছিল বেশ মজার, তাই না? সেই সময় চীনে তৈরি করা ঘুড়িগুলো ছিল অন্যরকম, তৈরি হতো সিল্ক কাপড় আর বাঁশ দিয়ে, কোনোটাতে আবার ব্যবহার করা হতো পাতলা কাঠও। ঘুড়ি আমাদের কাছে খেলনা হলেও চীনারা কিন্তু ব্যবহার করত কাজেই। ধারণা করা হয় দূরত্ব মাপা, বাতাসের গতি নির্ণয়, সংকেত আদান-প্রদান ও সেনাবাহিনীর যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হতো ঘুড়ি।
পরবর্তীকালে ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ির প্রচলন হয়। এভাবে একসময় ঘুড়ি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীব্যাপী আর ঘুড়ির প্রতি বাড়তে থাকে মানুষের আগ্রহও। এখন তো ঘুড়ি ওড়ানো মানুষের এক প্রকারের শখও বলা চলে।
সময়ের পরিক্রমায় অবশ্য ঘুড়ির আকার আকৃতি, সাজসজ্জায় এসেছে নানা পরিবর্তন। এখন আর দূরত্ব মাপা কিংবা বাতাসের গতি নির্ণয়ে ঘুড়ি ব্যবহৃত হয় না, তবু বেড়েই চলেছে এর প্রচলন। প্রতিনিয়তই আয়োজন হচ্ছে ঘুড়ি খেলা, ঘুড়ি উৎসবসহ ঘুড়িকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান। ঘুড়ি সত্যিই আমাদের মনকেও আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যায়, একবার উড়িয়ে দেখতে পারো তোমরাও।
তোমরা কেউ ঘুড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে উইকিপিডিয়ায় গিয়ে জানতে পারবে ঘুড়ি সম্পর্কে আরো তথ্য।