সাঁজোয়া যানে জ্ঞানের গোলা

স্থলযুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত এক সাঁজোয়া যানের নাম ট্যাংক। লম্বা কামানের নল বেরিয়ে থাকে এ গাড়ির। ভেতরে বোঝাই থাকে গোলাবারুদ কিংবা বিধ্বংসী সব যুদ্ধাস্ত্র। মনে করুন, কোনো ট্যাংকে যদি বারুদের বদলে থাকত বই! তাহলে তো অজস্র মৃত্যুর বদলে আমরা পেতাম অপার জ্ঞান আর শান্তি। এমন কল্পনা আপনার যদিএসেও থাকে, তবে জেনে রাখুন- এমনই এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন লাতিন আমেরিকান এক ভিন্ন ঘরানার শিল্পী। গণহত্যার অস্ত্রকে তিনি রূপ দিয়েছেন জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার উপকরণ হিসেবে। ট্যাংকের আদলে গড়ে তোলা তার বইয়ের গাড়ির হদিস মিলল বোরড পান্ডা নামের এক চিত্তাকর্ষক ওয়েবসাইট থেকে।
শিল্পীর নাম রাউল লেমেসফ। থাকেন আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। তিনি একটি ট্যাংকের আদলে নতুন গঠনে গড়েছেন একটি গাড়ি, দেখতে একেবারেই যেটি যুদ্ধক্ষেত্রের ট্যাংকের মতোই। পার্থক্য একটাই-যুদ্ধক্ষেত্রের ট্যাংক বোঝাই হয়ে থাকে গোলাবারুদে; আর প্রথাবিরোধী এই শিল্পীর ট্যাংক বোঝাই হয়ে থাকে অজস্র বইয়ে। এই ট্যাংক দিয়ে রাউলও চালিয়ে যাচ্ছে এক লড়াই, তবে সে লড়াই মানুষের জীবনের বিরুদ্ধে নয়। রাউলের লড়াই অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করতে, শিক্ষাহীনতাকে সমাজ থেকে নির্মূল করতে।
১৯৭৯ মডেলের একটি ফোর্ড ফ্যালকন গাড়িকেই এই বিচিত্র দর্শন ট্যাংকের আদলে গড়ে নিয়েছেন রাউল। আপাদমস্তকে যেকোনো ট্যাংকের সাথে এটি খাপ খায়। আর যুদ্ধক্ষেত্রের আর দশটা ট্যাংকের মতো এতে রীতিমতো ঘুরন্ত টারেট রয়েছে, রয়েছে কামান বা গোলাগুলি ছোড়ার লম্বা নলও (যদিও সেটি কার্যকর হিসেবে তৈরি করা হয়নি!)। তবে গোলাগুলি রাখার জন্য নয়, এর ভেতরে প্রায় এক হাজার বই রাখার জন্য বন্দোবস্ত রয়েছে।
লেমেসফ এই অভিনব ট্যাংক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বুয়েনস আইরেসের রাজপথ। ছেলেবুড়ো সবাইকে বিলিয়ে চলছেন জ্ঞানের রসদ। শর্ত তার একটাই - যে কেউ বই নিতে পারবে তবে বইটা তাদের পড়তেই হবে। তার কার্যক্রম নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে এসব ঘটনা। এ নিয়ে রাউল ঠাট্টাও করেছেন দারুণ রকম, ‘আমার অভিযান অনেক ভয়ংকর। আমি খুব দারুণ আর সুন্দর পথে আক্রমণ করি!’