প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি যেসব বিজ্ঞানী

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব স্বীকার করে নিতেই হবে। অসংখ্য বিজ্ঞানীর আবিষ্কার আমরা নিত্য ব্যবহার করে চলেছি। কিন্তু এর বাইরেও অনেকেই রয়ে গেছেন আড়ালে। অথচ তাঁদের আবিষ্কার আমাদের জীবনকে অনেকাংশেই বদলে দিয়েছে।
কিন্তু সময়ের আবর্তে আর ভাগ্যের অদ্ভুত খেয়ালে তাঁদের পরিচয় হারিয়ে গেছে। মেন্টালফ্লস ডটকম থেকে জানা গেল এমনই কিছু ভাগ্যাহত বিজ্ঞানীর নাম ও তাঁদের ভুলে যাওয়া কীর্তির কথা।
কর্নেলিস জ্যাকব ড্রেবেল (১৫৭২-১৬৩৩)
সাবমেরিন আমরা সবাই চিনি। অত্যাশ্চর্য এই সামুদ্রিক যানটির প্রথম আবিষ্কারকের কথা জানি কয়জন ? ডাচ বিজ্ঞানী ড্রেবেল ১৬২৪ সালে কাঠ আর চামড়া দিয়ে বানিয়েছিলেন বিশ্বের প্রথম সাবমেরিন। ১৬ জন আরোহী নিয়ে পানির ১৫ ফুট নিচ দিয়ে ঘণ্টা তিনেক দিব্যি ঘোরাফেরা করতে পারত এটি। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস টেমস ড্রেবেলের এই সাবমেরিনে করে ভ্রমণেও বেরিয়েছিলেন।
আডা লাভলেস (১৮১৫-১৮৫২)
বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রনের কন্যা আডা লাভলেস নিজেও কম প্রতিভাবান ছিলেন না। চার্লস ব্যাবেজ আবিষ্কৃত প্রথম কম্পিউটারটির প্রোগামিং করেছিলেন তিনি। সে হিসেবে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগামারও বলা যায় তাঁকে।
আন্তনিও মিউচ্চি (১৮০৮-১৮৮৯)
যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন ইতালীয় অভিবাসী আন্তনিও মিউচ্চি ১৮৫৭ সালে আবিষ্কার করেছিলেন টেলিফোনের মতো একটি যন্ত্র, যা দিয়ে তিনি নিজের ভূগর্ভস্থ গবেষণাগার থেকে বাসার দোতলার সাথে দিব্যি যোগাযোগ করতে পারতেন। এই যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন তিনি ‘টেলেট্ট্রোফোনো’। হাল আমলের টেলিফোনের পূর্বসূরি বলা যায় একে। তবে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর গবেষণা বেশি দূর আগাতে পারেনি। মিউচ্চির আবিষ্কারের প্রায় ২০ বছর পরে গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন।
স্যার জোসেফ সোয়ান (১৮২৮-১৯১৪)
বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিষ্কারক হিসেবে টমাস এডিসন সবার পরিচিত হলেও স্যার জোসেফ সোয়ান এডিসনের বেশ আগেই ১৮৮০ সালে বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন। লন্ডনের স্যাভয় থিয়েটারে তাঁর এই বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহৃত হয়েছিল। মজার কথা হলো টমাস এডিসনের সাথে কিন্তু এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর ভালোই জানাশোনা ছিল। একই আবিষ্কার নিয়ে দুজনের মধ্যে কিঞ্চিত মনোমালিন্যও হয়েছিল। পরে দুজনে মিলে একটা সমঝোতায় পৌঁছান এই যুক্তিতে যে, এডিসনের বাল্ব বিক্রি হবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং সোয়ানের বাল্ব বিক্রি হবে যুক্তরাজ্যে!
গুস্তাভা হোয়াইটহেড (১৮৭৪-১৯২৭)
জার্মান অভিবাসী গুস্তাভা হোয়াইটহেড ১৯০২ সালে দাবি করেছিলেন যে তিনি তাঁর আবিষ্কৃত উড়োজাহাজে করে আকাশে উড়তে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর দাবি সত্য হলে বলা যায় উড়োজাহাজের আবিষ্কারক আসলে রাইট ভাতৃদ্বয় নন। হোয়াইটহেডের এই দাবির স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ হলো এই যে, ১৯০১ সালের বেশ কিছু পত্রপত্রিকা তাঁর এই আকাশ ভ্রমণের খবর ছাপিয়েছিল। এডউইন আর্মস্ট্রং (১৮৯০-১৯৫৪)
এফএম রেডিও আজকাল খুবই পরিচিত একটি নাম। নিউইয়র্কের অধিবাসী এডউইন আর্মস্ট্রং এর আবিষ্কারক হিসেবে পেটেন্ট পেয়েছিলেন। পরে আরো গবেষণার জন্য তিনি রেডিও করপোরেশন অব আমেরিকায় (আরসিএ) যোগ দেন, আর সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। আরসিএ তাঁর আবিষ্কারের পেটেন্ট না কিনে নিজেরাই গবেষণা চালাতে শুরু করে। পরে পেটেন্ট সংক্রান্ত এক মামলায় এই বিজ্ঞানী আরসিএর কাছে নিজের পেটেন্টের স্বত্ব হারান। ক্ষোভে, হতাশায় আত্মহত্যা করেছিলেন আর্মস্ট্রং।
ফাইলো ফ্রান্সোর্থ (১৯০৬-১৯৭১)
টেলিভিশনের আবিষ্কারক হিসেবে জন এল বেয়ার্ডের নামই সবাই জানে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মার্কিন বিজ্ঞানী ফাইলো ফ্রান্সোর্থ ১৯২৭ সালে এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যা দিয়ে ছবি পাঠানো যেত। নিজের এই যন্ত্রের নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘ইমেজ ডিসেক্টর’। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত মদ্যপান আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফাইলো ফ্রান্সোর্থ।
রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন (১৯২০-১৯৫৮)
বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও নারী-পুরুষের ভেদাভেদ কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তার সব থেকে বড় উদাহরণ হলো রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন। ডিএনএর আবিষ্কারক হিসেবে ওয়াটসন আর ক্রিকই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিন্তু মজার কথা হলো তাঁদেরও আগে রোজালিন্ড ডিএনএর গঠন আবিষ্কার করে বসেছিলেন।
রোজালিন্ডের গবেষণার কাগজপত্র তাঁর সহকর্মীরা ওয়াটসন এবং ক্রিককে দেখালে তারা সেই সুযোগে নিজেদের গবেষণার ফলাফল আগেভাগে প্রকাশ করে দেন এবং নোবেল পুরস্কারসহ অন্যান্য সম্মাননাও কুক্ষিগত করে ফেলেন। আর রোজালিন্ড হারিয়ে যান ইতিহাসের গর্ভে।