বুয়েটের ঘটনায় চলমান অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
আবরার হত্যার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের মধ্যেই গতকাল শনিবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সার্বিক কর্মসূচি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন। আজ রোববার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ বিবৃতি তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর থেকে বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ রয়েছে। এরপরও গতকাল শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম ভবনের সেমিনার কক্ষে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট-এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’-এর ব্যানারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অথচ বুয়েটের প্রশাসনিক আইন অনুসারে, বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক সকল শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার দেখে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অবহিত করে এবং কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান নেয়। তবে, সেমিনার কক্ষে ওই অনুষ্ঠানে কোনো বাধা প্রদান করেননি এবং অনুষ্ঠান যথারীতি সমাপ্ত হয়।’
সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সেসময় একটি বিবৃতি উত্থাপন করা হয়। অথচ, গতকালের বিক্ষোভ মিছিলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করা। অতীতে বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিরাজমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি হয়েছেন। সর্বশেষ মারা যান আবরার ফাহাদ। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কালো থাবা বর্তমানে নিরাপদ আমাদের ক্যাম্পাস যেন আবারও ত্রাসের রাজত্বে পরিণত না হয়, সেই আশঙ্কার জায়গা থেকে গতকাল আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত হই। অথচ, আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে আমাদের কর্মসূচি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জোর অপপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ওই অপপ্রচারে আমরা ভীত, সন্ত্রস্ত ও একইসঙ্গে ব্যথিত।’
বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘আমাদের গতকালের কর্মসূচি কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠান বিরোধী ছিল না। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সাধারণ আদর্শকে আমরা সমৃদ্ধিময় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত। আমরা এও বিশ্বাস করি যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সার্বজনীন, তাঁর চেতনা ধারণ করতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের পরিচয় ধারণের প্রয়োজন পড়ে না।’
বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবস পালনের বিষয়ে বলা হয়, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় দিবস সমূহের অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সোমবার বিকেল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেইসঙ্গে গতকাল উপাচার্য মহোদয় বরাবর লিখিত আবেদনপত্রে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।’