ঘুরে দাঁড়িয়েছে হিলি স্থলবন্দর, রাজস্ব আয়ে রেকর্ড
বিগত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব ঘাটতিতে থাকা দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৬-২০১৭) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ১৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছে বন্দরটি।
বন্দরের স্থানিয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, সমাপ্ত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেঁধে দেওয়া ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় ১৯০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় তিনগুণ।
পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে গতিশীলতা,স্বচ্ছতা এবং কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের আন্তরিকতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
কাস্টমস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের জুলাই মাসে আয় হয় তিন কোটি ৯৮ লাখ ৬৭ হাজার, আগস্ট মাসে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার, অক্টোবর মাসে নয় কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার, নভেম্বর মাসে নয় কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার, ডিসেম্বর মাসে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার, জানুয়ারি মাসে ২৬ কোটি ৪৫ লাখ ২৭ হাজার, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১ কোটি ৭০ হাজার, মার্চ মাসে ২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮২ হাজার, এপ্রিল মাসে তিন কোটি ৯০ লাখ, মে মাসে ৩০ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার এবং জুন মাসে মাসে ২০ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
হিলি স্থলবন্দরের বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. কামাল হোসেন রাজ বলেন, বর্তমানে এই বন্দরের মাধ্যমে পাথর, চাল, পেঁয়াজ, খৈল, গম, ভূসি, ভুট্টা, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়। শুল্কযুক্ত পণ্য যেমন আমদানি হয়, তেমনি শুল্কমুক্ত পণ্যও আমদানি হয়ে থাকে। তবে ভারতে পণ্য রপ্তানি করা গেলে রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে হিলি স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত কুমার চক্রবর্তী ওরফে নেপাল জানান, পানামা পোর্টের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত অবকাঠামোসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে স্বচ্ছতা থাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
এদিকে, রাজস্ব আদায়ে বিগত দুই অর্থ বছরের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় অর্জন করতে পারেনি হিলি স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
ওই বছরে ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় করে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর পরের অর্থ বছরে ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও আদায় হয় ৭০ কোটি ৯৪ হাজার টাকা। সেই পর্যালোচনা করেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সমাপ্ত অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়। কিন্তু এবার আগের তুলনায় পণ্য আদানি-রপ্তানিতে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা, অনিয়ম বন্ধ হওয়ায় এবং কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের আন্তরিকতার কারণেই তিনগুণ রাজস্ব আয় হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরের হিলি শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ফকরুল আমিন চৌধুরী বলেন, শুধু পাথর আমদানি থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর চাল আমদানিতে আসে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও ভ্রমণকর থেকে পাওয়া যায় বাকিটা। তিনি আরো বলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বন্দরের ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতার সঙ্গে সার্ভিস দিচ্ছেন। ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়ে আসার পর পরই পণ্যটি ছাড়করণে শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম দ্রুত করা হচ্ছে। যাতে ব্যবসায়ীরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন। এসব কারণে হিলি স্থলবন্দরে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বন্দরটি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে সরকারের রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধি পাবে।