হাসতে মানা
আতঙ্কে আছি ভাই
তাপসের সঙ্গে দেখা হলেই বলে, আতঙ্কে আছি ভাই। হঠাৎ তার আতঙ্কের কারণ কী? খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল ঘটনাটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ভূমিকম্প আতঙ্কে আছে ভাইটি আমার। ঘটনা হলো, ওর অফিস ষোল তলায়।
ভূমিকম্প শুরু হলে নিচে নামার সময় পাওয়া যাবে না। এরই মধ্যে ঝাঁকুনির সময় সে অফিসে বসে দুলুনি খেয়েছে। আর ভেবেছে উঁচু ভবনের দুলুনির মজাই আলাদা। তার ঘনিষ্ঠজনেরা যখন জেনেছে, ভূমিকম্প শুরু হলে, তার পক্ষে নিচে নামা সম্ভব নয় তখনই পরামর্শের ঝুলি নিয়ে এসেছে। কেউ বলেছে, কুচ পরোয়া নেহি, টেবিলের নিচে চলে গেলেই হবে। ভূমিকম্প শেষ হলে বের হয়ে আসবে। ওর এক বান্ধবী এক কাঠি সরেস, ভয় পাবি না। খাটের নিচে চলে যাবি। তাপস তো অবাক, আরে বাবা অফিসে কি আর খাট থাকে! এ কোন ধরনের বাজে কথা।
বান্ধবীকে এ কথা বলতেই সে হেসে বলে, অফিসকে বললেই একটা খাটের ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা অনুমতি নিয়ে একটা খাট কিনে নিলেই হয়। অফিসে খাট রাখার এই উদ্ভট আইডিয়া শুনে ওর পিত্তি জ্বলে গেল। মেজাজ খারাপ হলেও মুখে হাসি রেখে বান্ধবীকে বলে, চেষ্টা করে দেখব। আর খাট রাখার আইডিয়া তো অসাধারণ। বান্ধবীকে আর বলা হলো না চৌকির প্রচলন মধ্যবিত্তের ঘরে তো নেই বহু বছর। খাটের ক্ষেত্রেও এসেছে বক্স খাট। বক্স খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া যায় না। ওটা তেলাপোকাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরপর থেকে যাকে পায় তাকেই বলে, আতঙ্কে আছি ভাই।
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলেও মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। এই তো সেদিন ওর বাসটা ব্রেক কষল, মনে হলো ভূমিকম্পে বুঝি বাস কেঁপে উঠেছে। লোকজনের কাছে এখন প্রেমিকার চুম্বনের চেয়ে এই কম্পনের চুম্বন আতঙ্ক আক্রমণ করেছে।
আর করবেই না কেন, প্রেমিকার চুম্বনে খুব বেশি হলে তাকে বিয়ে করতে হবে। অথবা প্রেমিকার বড় ভাইয়ের হাতে ধোলাই খাওয়া। আর ভূমিকম্প একবার কাঁপিয়ে দিলেই দফারফা, জান নিয়ে বাঁচার সম্ভাবনা নেই। পাঁচ দিন পর উদ্ধার করা হবে মরদেহ।
আমাদের খালেক ভাই তো সঙ্গে সঙ্গে সব সময় কম্পাস আর টেপ রাখেন। রাস্তায় হাঁটতে থাকলে মেপে দেখে নেন, পাশের ভবনটি যদি ভেঙে যায় তাহলে কত দূরত্বে থাকলে কোনো বিপদ হবে না। তবে ঝামেলা হলো রাতে, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে তো ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হবে। তাই এবার গ্রামে চল প্রজেক্ট নিয়েছেন, সেখানে খড় আর বাঁশ দিয়ে ঘর বানিয়েছেন। একটাই ঝামেলা সেখানে দামি জিনিস রাখা যাবে না। সুযোগ পেলেই চোর সব নিজের মনে করে নিয়ে যাবে। তারপরও শান্তিতে বেঁচে থাকা তো যাবে। খড়ের আঘাতে নিশ্চয়ই কেউ মারা যায়নি।
খবর পাওয়া গেল তাপস অফিসে আবেদন করেছে, তাঁর ডেস্কের পাশে যেন একটি লোহার ঘর রাখা হয়। অফিসও দয়া করে তাঁর এই আবেদন মঞ্জুর করেছে। আর করবেই বা না কেন, এটা একজনের জীবন-মরণ সমস্যা। খবর নিতে আমরা কয়েকজন ওর অফিসে গিয়ে দেখি পিঠে ব্যান্ডেজ নিয়ে বেচারি বসে আছে। ঘটনা জানা গেল। লোহার ঘরে অনুশীলন করতে গিয়ে তার পিঠ কেটে গেছে। আমাদের এক বন্ধু পরামর্শ দিল, একতলা কোনো একটা অফিসে যেন চাকরি নেয়। জবাবে তাপস বলে, আতঙ্কে আছি ভাই।