হাসতে মানা
বাজেটে প্রেম-প্রণোদনা প্যাকেজ চাই
প্রেমের মরা জলে ডোবে না- ছোটোবেলায় এই কথা শুনে ভাবতাম প্রেমে মরলে বোধ হয় জল ভাসিয়ে রাখে। সব মরাই জলে ডোবে। সে বিদেশে যাবার জন্য নৌকায় চড় কিংবা সরকারি ডোবায় বাঁশ দিয়ে ঘর বানাও। জলে নামলে মরতেই হয়। এক সময় গোয়ালন্দ দিয়ে লঞ্চে পদ্মা পার হতাম। লঞ্চে চড়েই ছাদে বসে থাকতাম। ছাদ ডুবতে সময় নেবে তাই পরে মরব- এসব নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললে, ওরা তো হেসেই খুন। শুধু একজন বন্ধু ছিল যে গম্ভীর হয়ে বলত, ছাদে থাকলে ডোবার সম্ভাবনা কম। কারণ পদ্মায় পানি কম, ছাদ পর্যন্ত লঞ্চ ডোবাতে পারবে না। ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া শুরু করলাম। আবার ফিরে যাই প্রেমে।
এখন অনেক বড় হয়েছি, সেটা বুদ্ধিতে নয় আকারে। এই বড় হওয়ার কালে নতুন বুদ্ধিও যে আসেনি তা নয়। প্রেম বিষয়ে জ্ঞান নিতে শুরু করেছি। নিজেও প্রেমে ঝাঁপ দিয়েছি বহুবার। প্রেমিকার তালিকায় নানা পেশাজীবীরাই আছেন। প্রতিদিন চলার পথে নতুন এক নারীর দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আহা সে যদি আমার ঘরে আসত। কখনো কখনো কল্পনায় তার সঙ্গে ঘর-সংসার করে সন্তানের বাবাও হয়ে গেছি। এসব ভাবি আর আমার কালো চুল সাদা হয়। আহা! প্রেম এমনি করে আমার বয়স কেড়ে নেয়। প্রেম বিষয়ে আমার এক বড় ভাইয়ের কথা না লিখলে অন্যায় হবে। তিনি ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করলেও নারী ও প্রেম বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান দেখে কখনো কখনো ভেবেছি, তাঁর উচিত ছিল এ বিষয়েও অফিসিয়াল একখানি ডিগ্রি নিয়ে নেওয়া। তার জ্ঞান দেখে সত্যিই মাথা অবনত হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এ নিয়ে দুকলম লিখব। তো সেই বড় ভাই লিখেছেন, প্রেম মানুষকে অপরাধ করতে উৎসাহী জোগায়। খুবই সত্যি, বিশেষ করে বেকার জীবনে। মোবাইল কোম্পানিওয়ালারা এ কষ্ট কিছুটা ভেবে মধ্যরাতে রেট কমিয়েছে। যার ফল এ অধম পাচ্ছে। মোবাইল ফোনে যদি একটি প্রেম প্যাকেজ থাকত তাহলে এই অধম প্রেমিকসহ বাংলার প্রেমে সুদিন ফিরে আসত।
ঢাকা শহরে অতি উচ্চমূল্যে ইয়েলো ট্যাক্সিক্যাব চলছে। এই ক্যাব শুধু ঘুষখোরদের কথা ভেবেই ঢাকা শহরে মহাসমারোহে চলছে। ঢাকায় সরকারি উদ্যোগে যদি প্রেমের জন্য পিঙ্ক ক্যাব চালু করা যায় তো মন্দ হয় না। এতে প্রেমিক যুগলই চড়ে কম ভাড়ায় তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবে। এখানে সরকার ভর্তুকি দিবে, সরকারি ভুর্তকিতে প্রেমিক-প্রেমিকারা আনন্দিত হবে। এমন বিষয়ে নিয়ে লিখব শুনে এক ভুক্তভোগি প্রেমিকা আরেকটা অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা শহরে ন্যায্যমূলে বেশ কয়েকটা লাভ শপ তৈরির জন্য। এখানে যুগলদের জন্য স্বল্পমূল্যে খাবারসহ বিভিন্ন কার্ড এবং গিফট আইটেম পাওয়া যাবে।
সরকার এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে একদম নজর দেননি। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশে লাখ-লাখ প্রেমিক-প্রেমিকা আছে (এখানে অবশ্য পরকীয়া প্রেম বাদ রাখা হয়েছে)। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। এরা যদি কোনো একটি দলকে সমর্থন করে তো সেই দল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। তাই আজ সব রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের প্রতি আকুল আবেদন, ভাইসব, আসুন বাজেটের আগে প্রেমের জন্য আওয়াজ তুলি নিজের দলকে শক্তিশালী করি। সারা দেশের দেয়ালে আপনাদের উদ্যোগে লাগাবেন একটাই পোস্টার, একটাই ব্যানার যেখানে লেখা থাকবে বাজেটে প্রেম প্রণোদনা প্যাকেজ চাই।
তানভীর আহমেদ সিডনি : নাট্যকার, নির্দেশক ও গবেষক