হাসতে মানা
আগুন থেকে কয়লা তুলুন
উষ্ণতাকে আমার বড্ড ভয়। ভুলে গেলে চলে না যে এই উষ্ণতায় পুড়ে যায় চারপাশ। উষ্ণতার ভয়ে কখনো কোনো মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নির্জনে যাইনি। কোনো গোপন জায়গায় গেলেই বুক আমার ধুকপুক করে। এই বুঝি মেয়েটার গরমে মরে গেলাম। মেয়েরা পাশে থাকলেই উষ্ণ হয়ে যাই আমি। আরে বাবা হবোই বা না কেন? ওরা হলো আগুন আর আমি মোম। দুটো মুখোমুখি হলে মোম বেচারা উষ্ণ হয়ে গলবেই।
বৈশাখের পর থেকে নারী ছাড়াই দিনমান উষ্ণ থাকি, প্রকৃতির অভিশাপ বলা যায়। চারদিক ছাপিয়ে তাপ বাড়ে আর আমার শরীর গরম হয়। এই তো কয়েক দিন আগে রূপবতী এক নারীর সঙ্গে সিএনজি ভ্রমণ করছিলাম। তার কানের দুল কিংবা টিপের দিকে তাকালেই আমার বুক ঢিপঢিপ করে। গরমের দিন ভয়ে তাই তার কাছ থেকে মেপে মেপে দুই হাত সরে বসেছিলাম। এসব দেখে দুষ্টু সিএনজিওয়ালা মিটিমিটি হাসে আর হাসবেই না কেন, ঢাকা শহরে এমন বয়সের দুজন কাছাকাছি না বসলেই বরং সেটা অস্বাভাবিক মনে হয়। সে যাই হোক, আমি উষ্ণতার ভয়ে পালালেও কিছু পুরুষ আছে যারা এতটুকু উষ্ণতার জন্য কাতর। আহা! তাদের দেখলে করুণা হয়। শহরের ভিড় ভাট্টাতে তাদের পাওয়া যায়। কোনো একটি মেয়ে দেখে তো তার গায়ের নানা জায়গায় হাত দিয়ে ফেলে। মনে হয় এটা তার বাপ-দাদার সম্পত্তি। এদের থেকে রক্ষা পেতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে একদিন মামার কাছে চলে যাই। তিনি আবার আমায় সব পরামর্শ দেন কোনোরকম ফি ছাড়াই। মামা হাসতে হাসতে বলেন, ওদের রোগের নাম গরম রোগ। এই রোগের মোক্ষম দাওয়াই আছে আমার কাছে। তার কথা শুনে খুশিতে আমার মনটা ভরে যায়। গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করি, পথটা বলে দাও না মামা।
মামার মুখের হাসি আরো দীর্ঘ হয়। এবার তিনি আয়েস করে বলেন, আহা বুদ্ধি দিব, সময় তো দিতে হবে।
মামার চেহারা বলেই দিচ্ছে তিনি নিশ্চয়ই কোনো একটা রাস্তা পেয়ে গেছেন। তাই কোনো সন্দেহ ছাড়াই মামাকে বলি, পথটা বলে দাও না মামা।
ওরা সব সময় গরম থাকতে চায়। ঠান্ডা ওদের একদম পছন্দ নয়। তাই গরম করে দাও।
এ ধরনের কথা শুনলে কার না মেজাজ খারাপ হয়। তাই একেবারে বলে ফেললাম কি বলতে চাও তুমি?
আমার মেজাজ খারাপ দেখে মামা বললেন, শান্তি বৎস শান্তি। রেগে গেলে তো চলবে না।
তারপর মামা বলতে থাকেন, এই ধরনের লোকদের জ্বলন্ত কয়লার মাঝে শুইয়ে রাখতে হবে তাহলেই দেখবে শরীর গরম হয়ে গেছে। মামার কাছ থেকে বুদ্ধি নিয়ে ফূর্তিতে ফিরছি। সত্যি মামা একটা ভালো পথ দেখিয়েছেন।
বাড়ি ফিরেই টের পেলাম, ঘর গরম হয়ে আছে, স্থানীয় ঠান্ডা ছেলেরা ডান্ডা হাতে বাসার সবাইকে শাসিয়ে গেছে কেউ যদি তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করে তো খবর আছে। তারা আমার চলাফেরা কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।
আমি আবার শীতল পৃথিবীতে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছি, এমন সময় স্বপনে এসে এক নারী আমায় বলে, এমন ভয় পেলে চলে! তোমার জন্য একটা বুদ্ধি আছে। তারপর সে আমাকে বুদ্ধি দেয়।
সে বুদ্ধি অনুসারে একটা পোস্টার করি, যেখানে এই গরমের পথে হাটা চহী (চরিত্রহীন) পুরুষদের ছবি ছাপিয়ে লিখি, এদের জন্য আগুন থেকে কয়লা তুলুন। তারপর সেখানে শুইয়ে দিয়ে রক্ষা পান।