কী এই সুইসাইড ‘ব্লু হোয়েল’ গেম?
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/10/09/photo-1507525194.jpg)
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে মানুষ। বর্তমান প্রজন্ম মেতে আছে তাদের স্মার্টফোন আর ভিডিও গেমে। তবে এ গেমপ্রযুক্তিও আধুনিক হয়েছে।
সাধারণ ভিডিও গেমের বদলে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছে অনলাইন গেম। অবাক করার মতো বিষয় হলেও এটাই সত্যি, গেম খেলতে খেলতে একসময় আত্মহত্যা করতেও হৃদয় কাঁপছে না তাদের।
এমনই একটি গেমের নাম ব্লু হোয়েল। খেলার নির্দেশনা অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীকে ৫০টি ‘টাস্ক' শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে আঘাত করাসহ নানা রকম ভয়ানক ‘টাস্ক'। শেষ টাস্কটি আত্মহত্যা। এখন পর্যন্ত ১৩১ জন এর শিকার।
বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে মরণখেলা ‘ব্লু হোয়েল’ গেম। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটভিত্তিক এক ধরনের গেম এটি। এই গেমের নেশায় পড়ে রাজধানীতে আত্মহত্যা করেছে এক কিশোরী। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কী এমন মরণনেশার খেলা ‘ব্লু হোয়েল’? যা এক মেধাবী কিশোরীর প্রাণ কেড়ে নিল। কোথায় এর উৎপত্তি? এই প্রাণঘাতী গেম খেলে এ পর্যন্ত কত কিশোর-কিশোরী প্রাণ হারিয়েছে?
আগেই বলেছি, অনলাইন সুইসাইড গেম ‘ব্লু হোয়েল’। এই গেমের ৫০টি ধাপ। সর্বশেষ পরিণতি আত্মহত্যা। লেভেল ও টাস্কগুলো ভয়ংকর। গেম যত এগোবে, টাস্ক তত ভয়ংকর হতে থাকবে।
প্রথমদিকের টাস্কগুলো মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। কেউ খেলায় ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌঁছে যায় নির্দেশনাবলি। সেই মতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জগুলো একে একে পূরণ করে তার ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে।
প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা। তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আঁকতে হয় সেই তিমির ছবি। একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়। চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে।
গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলো। এই টাস্কগুলোতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে। প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহত্যা।
২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মরণখেলা। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দুই বছর পরে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে। যেন আত্মহত্যার জন্যই। সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল' বা নীল তিমি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে রাশিয়া, পার্শ্ববর্তী এলাকা ও বাংলাদেশসহ মোট ১৭ তরুণীর আত্মহত্যার খবর মিলেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের স্কুল শিক্ষার্থী স্বর্ণা (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে, সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) ও ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) একটি বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম'। ভারতেও মারা গেছে বেশ কয়েকজন। শেষ পর্যন্ত এটা হানা দিল বাংলাদেশে।
কেন এ ধরনের ভয়ংকর খেলায় মেতে ওঠে কিশোর-কিশোরীরা? মনোবিদরা বলছেন, ‘ওই বয়সটা এমন যে তখন একটা ডেয়ার-ডেভিল কিছু করে দেখানোর ইচ্ছেটা প্রবল হয়। তবে যারা এ রকম গেম বেছে নিচ্ছে, তাদের মনে হতাশা, আত্মমর্যাদার অভাব, মনোকষ্ট—এগুলো থাকেই। সে জন্য তারা এমন একটা কিছু করে দেখাতে যায়, যাতে লোকে তাদের অকুতোভয় বলে মনে করবে।’
মাঝপথে কেউ খেলা ছাড়তে চাইলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এমনকি প্রিয়জনদের ক্ষতি করার হুমকি দেয় তারা। এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে, যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে।
গেম শুরুর টাস্কগুলো অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়, বরং বেশ মজারই। আর সে কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন।