অভিমত
খেলা যেন নেশায় পরিণত না হয়
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/10/16/photo-1508136597.jpg)
আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিশু-কিশোরদের হাতে আমরা তুলে দিই মোবাইল কিংবা কম্পিউটার। ছোট থেকেই তাকে নানা ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিই। মোবাইল অথবা কম্পিউটারে গেম খেলায় অভ্যস্ত করে তুলি। এতে করে আমাদের অজান্তেই আমরা অনেক ক্ষতি করে ফেলি তাদের। ছোটবেলা থেকেই শিশুরা গেম খেলার কারণে পরবর্তী সময়ে তারা আসক্ত হয়ে পড়ে। এই আসক্তির কারণে তাদের পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট হয়। খেলা খারাপ কিছু নয়, কিন্তু এটি মাত্রাতিরিক্ত হলে তা খারাপই হয় বটে।
গেম খেলার ঝোঁক শুধু ক্ষতিকারকই নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে তার পরোক্ষ ফলও খুব গুরুতর আকার ধারণ করে। একসময় শিশু-কিশোররা অল্প বয়সেই চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলবে, যা অন্ধের কারণ। বর্তমান প্রজন্ম স্মার্টফোনে ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফোনে অথবা কম্পিউটারে অ্যাংরি বার্ডস, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স, টেম্পল রান, ফ্রুট নিনজা বা রেসিং গেমসহ নানা ধরনের গেম খেলতে দেখা যায়। খেলতে খেলতে একপর্যায়ে তারা আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে কখনো কখনো প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত নিতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। আর তারই প্রমাণ সাম্প্রতিককালে ব্লু হোয়েল গেম।
শিশুদের বর্তমান অনলাইন গেম খেলার প্রবণতা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়। শিশুদের ডিজিটাল গেম খেলার আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ছোট ছোট শিশুর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অত্যাধুনিক ট্যাব। সারা দিন এই ট্যাব নিয়েই পড়ে থাকে তারা। যার কারণে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা কম হয়, যা তার মানসিক বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ থেকে যত দ্রুত সম্ভব তাদের রক্ষা করা উচিত।
গেম খেলা ভালো। শিশুদের নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা বাড়ে। কিন্তু এটা যখন নেশায় পরিণত হয়, তখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে যায় শিশুটি। আবার দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হলে খুবই খারাপ হবে। শিশু-কিশোরদের মন কৌতূহলী। তারা নতুন নতুন বিষয় জানতে আগ্রহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। শিশুকে যদি গেম খেলতে দেওয়া হয়, তাহলে লক্ষ রাখতে হবে তারা যেন বেশি কৌতূহলী না হয়। কারণ, কৌতূহল থেকে এটি নেশায় পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
শিশুদের বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধরনের গেম। অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। এর জন্য দায়ী তাদের পরিবার। কারণ, পরিবার তাদের খোঁজখবর নেয় না। পরিবারের মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের আরো বেশি সময় দেওয়াই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে। আরো একটি বিষয়ে জোর দেওয়া দরকার, শিশু-কিশোরদের সঙ্গে মা-বাবার বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা। জলজ্যান্ত মানুষের অবহেলা থেকেই তারা অনলাইন গেমের দিকে ঝুঁকছে।
আমাদের অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রতি। তারা কখন কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশছে। মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের ওপরেও নজর রাখতে হবে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে ও গেম খেলায় আঙুল ব্যথা করে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যবহারকারীর হাতের গঠন পাল্টে যেতে পারে। চিমটি দিয়ে ধরার সামর্থ্য ও অ্যানলার্জড মেডিয়ান নার্ভ নামের হাতের অসুখও হতে পারে।
প্রযুক্তির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক স্থাপন করা দরকার। যেখানে সেখানে বসে গেম না খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় সেলফোন সরিয়ে রাখা, রাতে কখনো ঘুম ভেঙে গেলে উঠে বসে ফোন না হাতে নেওয়া, এসব জিনিস মেনে চললেই ফোন আসক্তি ও গেম আসক্তি কাটানো যাবে। শিশুরা কম্পিউটার ব্যবহার করে সাধারণত গেম খেলা এবং ভিডিও দেখার জন্য। অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে রেখে প্রতিদিন কম্পিউটার ব্যবহারের সময়সীমা ঠিক করে দিন। শিশুকে মোবাইল ও কম্পিউটার গেম খেলার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিন।
বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। শিক্ষা, বিনোদন ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের তুলনা হয় না। তবে অবশ্যই এর ইতিবাচক দিকগুলোর বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে শিশুদের। ইন্টারনেট দুনিয়ার কোনো কনটেন্টে প্রবেশের আগে ভাবতে শেখান শিশুকে, যাতে সে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোনটা ইতিবাচক আর কোনটা নয়। শিশুর অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতে পারেন। এতে নেতিবাচক কোনো কনটেন্ট প্রদর্শিত হলে তা অনায়াসে প্রকাশ করবে শিশুরা। তবে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেম খেলার সুযোগ করে দিয়ে লক্ষ রাখা জরুরি যে ‘খেলা যেন নেশায় না পরিণত হয়।’
লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।