দৃষ্টিপাত
প্যারাডাইস পেপারসে তোলপাড় সারা বিশ্ব
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/11/08/photo-1510113026.jpg)
পানামা পেপারসের পর আলোচনার ঝড় তুলেছে প্যারাডাইস পেপারস। ১৮০টি দেশের ধনী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন ও মালিকানা-সংক্রান্ত ব্যাপক তথ্য ফাঁস হয়েছে, যা পরিচিতি পেয়েছে প্যারাডাইস পেপারস হিসেবে।
সাইবার স্পেসে এক কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির ডাটাবেসের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪০০ গিগাবাইট। প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁস করা নথিতে ১৯৫০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭০ বছরের নানা আর্থিক তথ্য রয়েছে।
নথিগুলোর প্রায় ৬৮ লাখ এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই ও করপোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। ২০১৬ পর্যন্ত অ্যাপলবাই ও এস্টেরা একসঙ্গে কাজ করেছে। আরো ৬০ লাখ নথি প্রায় ১৯টি আদালতের করপোরেট রেজিস্ট্রি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বেশিরভাগ তথ্য এসেছে বারমুডাকেন্দ্রিক অ্যাপলবাই নামে প্রতিষ্ঠান থেকে, যারা বড় কোম্পানিগুলোকে বিদেশের ব্যবস্থায় কম অথবা শূন্য করহারে কাজ করতে তাদের গ্রাহকদের সহযোগিতা করে।
তথ্য ফাঁস হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বের পরিচিত রথী-মহারথীরা।
পানামা পেপারসের মতো এবারও অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করেছে জার্মানির সুজডয়েচে জাইতুঙ্গ নামে একটি সংবাদপত্র। নথিগুলো সংগ্রহ করে পত্রিকাটি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টকে (আইসিআইজে) সরবরাহ করে। বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রায় ১০০টি মিডিয়া তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে।
প্যারাডাইস পেপারসে ১৪ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানসহ কমপক্ষে ৪৭টি দেশের ১২৭ জন রাজনৈতিক এবং সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণী রয়েছে।
প্যারাডাইস পেপারস অনুসারে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ ব্যক্তিগত ১৩ মিলিয়ন ডলার অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। বিতর্কিত যুক্তরাজ্যের ব্রাইট হাউসেও রয়েছে তাঁর বিনিয়োগ।
যদিও রানি এলিজাবেথ কোনো অবৈধ বিনিয়োগ করেননি এবং কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রানি হয়ে তিনি অফশোর মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন কি না।
প্যারাডাইস পেপারস বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের জন্য। এমনিতেই নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ইস্যুতে চাপে রয়েছে ট্রাম্প, চলছে তদন্ত। এরই মধ্যে প্যারাডাইস পেপারস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহযোগী বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের রাশিয়ার নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। উইলবার রস ১৯৯০ সালে ট্রাম্পকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন।
বাদ যায়নি তরুণ জনপ্রিয় কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নাম, যিনি অফশোর বিরুদ্ধে জোরেশোরে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছিলেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ। তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং লিবারেল পার্টির প্রধান তহবিল সংগ্রাহক ব্রনফম্যানের রয়েছে অফশোরে বিনিয়োগ।
তা ছাড়া অ্যাপল, নাইকি ও উবারসহ ১০০ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর পরিকল্পনা উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। প্যারাডাইস পেপারস আবার নতুন করে করব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে পুরো বিশ্বকে। রাঘববোয়ালরা কর না দিয়ে সম্পদের পাহাড় তৈরি করছে। কর ফাঁকির জন্য নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করে তৈরি করছে এক ধারাবাহিক জটিলতা। করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মধ্যবিত্তদের ওপর।
২০১৬ সালে পানামা পেপারসে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর একইভাবে হৈচৈ পড়ে সারা বিশ্বে।
যখন পৃথিবীর ১ শতাংশ মানুষের কাছে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের সম্মিলিত সমান সম্পদ জমা হচ্ছে, বাড়ছে ধনী ও গরিবের বৈষম্য, তৈরি হচ্ছে অস্থিতিশীলতা, ঠিক তখনই এমন কাগজপত্র ফাঁসের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, লাগাম ধরার সময় এখনই।
লেখক : শিক্ষার্থী, সিএসই বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।