লন্ডনে মেয়র নির্বাচন
জরিপে এগিয়ে পাকিস্তানি বাসচালকের সন্তান
লন্ডনের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বিরোধী লেবার পার্টি সমর্থিন অভিবাসী সন্তান সাদিক খান এই নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন। অধিকাংশ জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সমর্থিত জ্যাক গোল্ডস্মিথের চেয়ে প্রায় ২০ ভাগ বেশি সমর্থন পাচ্ছেন বাসচালকের সন্তান সাদিক। জিততে পারলে তিনি হবেন মর্যাদাপূর্ণ কোনো পশ্চিমা শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র। এরই মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে লন্ডনের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুনিয়ার আর কোনো শহরে ভোটারদের মধ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণের এত বৈচিত্র্য দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সমর্থিত গোল্ডস্মিথ কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত উগ্র মুসলিমদের সঙ্গে সাদিকের অতীত সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিকের জন্ম ১৯৭০ সালে। ছয় ভাইবোনের পরিবারে বেড়ে উঠেছেন লন্ডনেই। স্কুলজীবনে তাঁর আগ্রহ ছিল ডেন্টিস্ট হওয়া। তবে এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় আইনকে পেশা হিসেবে নেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে তিনি প্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন তাঁকে ২০০৮ সালে যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী সাদিক।
নামি আইনজীবী সাদিক জোরালোভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা উগ্রবাদ পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাবেক এই মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী বরং বলছেন, তিনি সারা জীবন চরমপন্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছেন। সাদিক উল্টো অভিযোগ তোলেন, গোল্ডস্মিথ ব্রিটিশ সমাজকে ডোনাল্ড ট্র্যাম্প স্টাইলে বিভক্ত করতে চাইছেন।
জরিপ সংস্থা ইউগভ-এর পরিচালক এ্যান্থনি ওয়েলস মনে করেন, এ ধরনের চরম পাল্টাপাল্টি প্রচারণা কিছু ভোটারের ওপর প্রভাব ফেলতেও পারে। ফলে সাদিককে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা কিছু ভোটার শেষমুহূর্তে মনোভাব পরিবর্তন করতে পারেন। কনজারভেটিভ শিবির আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে সে চেষ্টায় করে যাচ্ছে। লেবার পার্টির এক এমপির ফেসবুকে করা ইহুদিবিরোধী মন্তব্যে শেষ সময়ে বিতর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। সাদিক সঙ্গে সঙ্গে সে মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং সাবেক মেয়র লিভিংস্টোনকে তাঁর প্রচারণা থেকে প্রত্যাহার করে নেন। লেবার পার্টিও সাবেক মেয়র কাম বর্তমান এমপিকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
জনমত জরিপের তথ্য বলছেন, দুই এমপির কথার লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত সাদিকের বক্তব্যেই বেশি আস্থা দেখিয়েছেন প্রায় ৮৬ লাখ লন্ডনবাসী। প্রবাসী বাঙালিদের বেশির ভাগই সাদিকের সমর্থক। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিন বাঙালি মেয়ে রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক আর রুপা হকও লেবার পার্টি প্রার্থী সাদিকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রবাসী পাকিস্তানিদের কেউ কেউ অবশ্য মধুর সমস্যায়। কারণ শুধু সাদিক নয়, অন্য প্রধান প্রার্থীদের মধ্যেও আছে পাকিস্তানি কানেকশন। রক্ষণশীল প্রার্থী জ্যাক ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা খানের ভাই।
পৃথিবীর অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্রের নগরপতি হতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও ভিন্ন মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ইংল্যান্ডের থাকা না থাকা নিয়ে ২৩ জুন গণভোট হবে। রক্ষণশীল প্রার্থী বনেদি ধনকুবেরের সন্তান গোল্ডস্মিথ চান ইইউ থেকে বের হয়ে যেতে। আর উপমহাদেশীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের সাদিকের ইচ্ছা যুক্ত থাকা।
গণভোটের মাধ্যমে ২০০০ সালে লন্ডনের মেয়র পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রথম মেয়র ছিলেন লেবার পার্টির কিন লিভিংস্টোন। চার বছরের দুই মেয়াদ শেষে তিনি হেরে যান জনসনের কাছে। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তৃতীয়বার মেয়র পদে না লড়ার সিদ্ধান্ত নেন রক্ষণশীল বরিস জনসন। তার উত্তরসূরি হতে লড়ছেন ১২ জন। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের ভোটাররা তাঁদের প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ জানাবেন। প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী যদি ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পান, তাহলে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে। লন্ডনে বসবাসকারী ব্রিটিশ, আইরিশ, কমনওয়েলথ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যে কোনো নাগরিক, যার বয়স ১৮ বছরের বেশি তিনি এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, একুশে টিভি।