বড়দিন

মনুষত্ব ও সহমর্মিতার অন্যরকম বড়দিন

Looks like you've blocked notifications!

আজ বড় দিন। ২৫ ডিসেম্বর। এদিন যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। সেজন্য খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটির গুরুত্ব বিবেচনাতেই এটি আসলে বড়দিন হিসেবে পরিচিত। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এইদিন বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর আগমন ঘটেছিল এ ধরায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা, আচার, আনন্দ, উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে।

দিনটি উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী  পরিবারগুলোতে কেক তৈরি হচ্ছে, থাকছে বাড়িতে বাড়িতে বিশেষ খাবারের অয়োজনও। শুধু রাজধানী শহরে নয় সারা দেশের বিভিন্ন  অঞ্চলে বসেছে ধর্মীয় গানের আসর। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন হলেও বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই এর উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে। শুধু তাই নয়, সেজন্যই গত সপ্তাহে রাজধানীতে বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্মের জন্য প্রথম বাঙালি ফাদার বেঞ্জামিন ডি রোজারিওকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এ গৌরব ও সম্মান অর্জন করলেন। তিনি মাসখানেক আগে বিশ্ব ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ খ্রিস্টধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতা ‘কার্ডিনাল’ হিসেবে নিয়োজিত হয়েছেন, যাঁকে এবারের বড়দিনের আগেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বরণ করে অভিষিক্ত করা হয়েছে। কার্ডিনাল হলো খ্রিস্টিয় ধর্মের এমন একটি মর্যদাপূর্ণ পদবি যিনি ইচ্ছে করলে ভ্যাটিকানের জন্য পোপ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন।

এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের খ্রিস্টান অধিবাসীদের জন্য একটি গৌরব ও মর্যাদার বিষয়। আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও এটি ঐতিহ্যগতভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে ধর্মে ধর্মে রয়েছে সম্প্রীতির বন্ধন। একেক ধর্মের আচার অনুষ্ঠান একেক রকম হলেও সেখানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রয়েছে। মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদও যেমন সবধর্মের মানুষ সমান আনন্দে ভাগাভাগি করে পালন করে। ঠিক হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য পূজাতেও সবাই আনন্দে একাকার হয়ে পড়ে। বাদ যায় না বৌদ্ধ পূর্ণিমার আচারাদি। তেমনি আজো বাদ যাচ্ছে না খ্রিস্টানদের বড়দিন। সব আচার অনুষ্ঠানই এখন সার্বজনীনতা লাভ করেছে। ধর্মে ধর্মে যত মতভেদ কিংবা পার্থক্যই থাকুক না কেন সব ধর্মেরই মূল বাণী একটিই। আর তা হলো মানবপ্রেম, জীবপ্রেম, শান্তি, সাম্য ইত্যাদি। সেই শান্তিময় বাণী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বড়দিনে তাই গির্জায় গির্জায় সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জা দিয়ে। সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। সেখানে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ নিয়ে আসে বিশেষ আকর্ষণীয়ভাবে সজ্জিত ‘শান্তা ক্লজ’। কাজেই এবারেও বড়দিনে অনুষ্ঠানের সার্বজনীনতা রক্ষা করে দিনটি খ্রিস্টীয় কায়দায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে। সেখানে অতীতের সব ধর্মীয় আচারের মতোই যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজেই অন্যসব ধর্মের মতো মনুষত্ব ও সহমর্মিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে সেখানেও দিনটি নির্জঞ্ঝাট পালন করবে- সেটাই সবার বিশ্বাস।        

লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়