সাড়ে চারশ বছরের মোগল আমলের শাহী জামে মসজিদ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরানো সেকান্দরনগর সাহেববাড়ী শাহী জামে মসজিদ। উপজেলার ৩ নং ধলা ইউনিয়নে অবস্থিত এই মসজিদটি এখনো মুঘল আমলের অনন্য নিদর্শণের সাক্ষী হয়ে আছে।
মসজিদটির মূল অবয়ব এখনো অক্ষত। নান্দনিক স্থাপত্য কলায় নির্মিত মসজিদটি এখনো পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। বাহির থেকে মসজিদটি যতটা বড় দেখায়, ভেতরের অংশ তার তুলনায় অনেক ছোট। চারপাশের প্রশস্ত দেয়াল মসজিদের ভেতরের অংশ ছোট হওয়ার কারণ। মুগল আমলের এই মসজিদটিতে তিনটি কাতারে ২৩ জন করে মোট ৬৯ জন মুসল্লী নামায আদায় করতে পারে।
এভাবেই চলছিল প্রায় সাড়ে তিনশত বছর। পরে মুসল্লীদের জায়গা সংকুলান হওয়ায় শতাধিক বছর আগে সেকান্দরনগর সাহেববাড়ীর বড় সাহেব সৈয়দ আবদুল হাকাম নিজ অর্থায়নে মসজিদের সামনের অংশে ফ্লোরপাকা টিনশেডের একটি চালা নির্মাণ করেন। আটটি মিনার বিশিষ্ট মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে রয়েছে একটি করে প্রবেশ পথ। সম্মুখের দিকে প্রবেশ পথ বরাবর রয়েছে একটি মেহরাব। প্রশস্ত দেয়াল বিশিষ্ট পত্রখিলান সমৃদ্ধ তিনটি প্রবেশ পথ যা মুগল স্থপত্যর ঐতিহ্য বহন করে। আয়তাকারে নির্মিত এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট এবং প্রস্থ ২৫ ফুট। এই মসজিদের সম্মুখের সাহনের পরিমাণ ৫৪ ফুট বাই ৩৬ ফুট। মসজিদটি দেখলেই বইয়ে পড়া সাড়ে চারশো বছর আগের মুঘল আমলের ইতিহাস মনে পড়ে যাবে। মসজিদটিকে এলাকার লোকজন সাহেব বাড়ী শাহী জামে মসজিদ নামে ডাকে।
জেলা সদর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে ২৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই মসজিদটি দেখার জন্য দেশি বিদেশী পর্যটকরা ভীড় জমায়। মসজিদের খোঁজখবর নিতে গেলে মসজিদের আশেপাশে পাওয়া যায় সেকান্দর নগর সাহেববাড়ীর সৈয়দ আবদুল মুমিত সোয়েব (৬৬) সৈয়দ লুৎফর রহমান (৬৩) সৈয়দ সুলতান মাহমুদ সা'দাত (৫০) ও মসজিদের বর্তমান ইমাম মাওলানা সৈয়দ আবু সায়েম (৫৫)। তাদের সাথে আলাপ করে মসজিদটি নির্মাণের কোনো সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে তাদের বংশানুক্রমে শুনে আসা কথা থেকে ধারণা করা হয় ষোড়শ শতকের শেষ দিকে সম্রাট আকবরের রাজত্বের সময় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তারা বলেন, বাংলাদেশে মোগল আমলে যতগুলো মসজিদ নির্মাণ হয়েছে সেগুলোর স্থাপত্য প্রায় একই রকম। সেই সময়ে অঞ্চলটি বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া ঈসা খানের ১১ নং পরগনা ছিল। সেকান্দরনগর মৌজার ১ নং খতিয়ানভূক্ত ৫৬৫ সাবেক দাগে ১০ শতাংশ ভূমির উপর মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকায় মসজিদটি আছে কিনা জানতে চাইলে জানা যায়, ১৯৮২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ.এম.এস ফরহাদ ৬০৭ নম্বর স্মারকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এস. জামান মজুমদার বরাবরে একটি ডি.ও লেটার পাঠায়। যার নং - ডি.ও.নম্বর জে: প্র: কি: ৬৭-৬০৭। ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেন। পরে ১৯৯৮ সালে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত স্থাপত্যটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি। পাশেই মসজিদ সংলগ্ন একটি গভীর পুকুর। যার পাড় ভেঙে পড়ছে ফলে মসজিদটি হুমকির মুখে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ না হলে মোগল আমলের এই মসজিদটি কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই মসজিদটি রক্ষায় জনগণ ও প্রশাসনের আন্তরিক হওয়া অতীব জরুরী।