সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ সোমবার (১১ মার্চ)। কমেছে বাজারে মূলধন পরিমাণ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এদিন ৭০০ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে। সূচক পতনের একই চিত্র ছিল অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। কমেছে পুঁজিবাজারে মূলধন পরিমাণ। বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিএসইতে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের উত্থান হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম ১৭ মিনিটে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থান হয় ২১ পয়েন্ট। সেই সময় ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করেছিল ছয় হাজার ৯৬ পয়েন্টে। পরে সূচক নিম্নমুখি অবস্থান করে। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স পতন ১৬ পয়েন্ট। লেনদেন ৭৫৪ কোটি টাকা। ১৭৪ কোম্পানির দর উত্থান হয়। অপরদিক সিএসইতে লেনদেন শুরুতে প্রধান সূচক উত্থান হয়। পরে সেই সূচক পতনে অবস্থান করে। লেনদেন শেষে প্রধান সূচক সিএএসপিআই পতন তিন পয়েন্ট। লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা। ১২৪টি কোম্পানির দরপতন হয়।
আগের কর্মদিবস রোববার (১০ মার্চ) লেনদেন শুরুতে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ত্রুটি দেখা যায়। ওয়েবসাইটিতে সব ধরনের সূচকে ভুল তথ্য দেখা দিয়েছিল। সূচকের গ্রাফ হালনাগাদে নানা সমস্যা তৈরি হয়। এতে ওয়েবসাইট থেকে পুঁজিবাজারের প্রকৃত অবস্থা জানতে না পারায় বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখা যায় সূচকগুলোতে। গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম দেখায়। আলোচিত একই সময় শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস আগের দিনের চেয়ে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম দেখিয়েছে। তবে ডিএস৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে দশমিক ১০৬ শতাংশ বেশি ছিল। অবশ্য ওইদিন বেলা সাড়ে ১০টা ওয়েবসাইটে সূচক তিনটির সব তথ্য দেখানো যায় শূন্য। লেনদেন শেষে সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৯৭১ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৪১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক এক হাজার ৩০৪ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৮৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে। কিন্তু আজ লেনদেনে শুরুর আগেই সেই ভূল তথ্য সংশোধন করে ডিএসই। কিন্তু আজ লেনদেন শুরুর আগেই সূচকগুলোর সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেই হিসেবে লেনদেন শুরুতে ডিএসইএক্স ছিল ছয় হাজার ৭৫ দশমিক ২৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইএস সূচক এক হাজার ৩২৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৭৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস রোববার লেনদেন ৪৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৪০ হাজার ৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস রোববার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৪১ হাজার ৫০৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার। সোমবার সূচক ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৮ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক দুই দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২২ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস৩০ সূচক সাত দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৪টির ও কমেছে ১৬৩টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৫৯টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিমের ৪৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, গোল্ডেন সনের ২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ২১ কোটি সাত লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, বেস্ট হোল্ডিংসের ১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বিকন ফার্মার ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ফাইন ফুডসের ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং আফতাব অটোর ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে সোমবার ২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস রোববার লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৪৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস রোববার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক তিন দশমিক ২১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৭ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক এক দশমিক শূন্য তিন পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮৭টির এবং কমেছে ১২৪টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ২৫টির।
আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের তিন টাকা ৩০ লাখ টাকা, ইবনে সিনার এক কোটি ২২ লাখ টাকা, ফাইন ফুডসের ৮২ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ৬৪ লাখ টাকা, এসএস স্টিলের ৫৩ লাখ টাকা, গোল্ডেন সনের ৫০ লাক টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ৪৬ লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৪১ লাখ টাকা এবং লাফার্জ-হোলসিমের ৩০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।