শেয়ারদর বেড়ে দ্বিগুনের বেশি, কারণ জানে না ইসলামী ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শেয়ারের দর বাড়ছে। গত ৩৫ কর্মদিবসে (গত ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১১৬ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ ১২ কর্মদিবসেই ব্যাংকটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ব্যাংকটির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোন লঙ্ঘন আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এরই ধারায় শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানে না বলে ডিএসইকে জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ডিএসই এ তথ্য জানিয়েছে।
ডিএসই জানায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নোটিশ পাঠিয়েছিল ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ব্যাংকটির শেয়ারের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। এতে শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশ ভাল আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
তারা বলছেন, নামে বেনামে ইসলামী ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার এখনও এস আলম গ্রুপের হাতে আছে। এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ খুবই কম। ফলে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এটির কারণে শেয়ারের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ আগস্টের লেনদেন শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। যা গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ৭০ টাকা ৪০ পয়সা। এই গত এক মাস ১৯ দিন বা ৩৫ কর্মদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ১১৬ শতাংশ। এছাড়া গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩৯ টাকা ২০ পয়সা। যেখানে গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ৭০ টাকা ৪০ পয়সায়। মাত্র ১২ কর্মদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ শতাংশ। অবশ্য আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনশেষে শেয়ারটির দর দাঁড়ায় ৬৪ টাকা ৪০ পয়সা। সেই হিসেবে একদিনে ব্যবধানে শেয়ার প্রতি দর কমেছে আট দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর আগে গত বুধবার ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অধিক পরিমাণ শেয়ার লেনদেনের কারণ ডিএসইকে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নির্দেশটি দিয়ে ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছিল বিএসইসি। যা ডিএসইকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি।
গতকাল বুধবার বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ও লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এটির পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কারসাজি বা অনৈতিক কোন লেনদেনের ঘটনা ঘটছে কিনা সেটিও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।
এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের গত ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালীন লেনদেন ও দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে বলা হয়। ব্যাংকটির গত ৬ আগস্টের লেনদেন শুরু হওয়ার আগের ৩২ টাকা ৬০ পয়সার শেয়ারটি ২৫ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৭০ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ এই সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ১১৬ শতাংশ। ব্যাংকটির দরবৃদ্ধির পেছনে কোন লঙ্ঘন আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চলতি বছরের (২০২৪ সাল) দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৯১ পয়সা। গত দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে দুই টাকা ২২ পয়সা। আলোচিত দুই প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৫৪ টাকা ৭৯ পয়সা। গত ৩১ জুন কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ছয় পয়সা।
গত সমাপ্ত বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২৩) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছিল তিন টাকা ৯৫ পয়সা। সমাপ্ত বছরে সমন্বিত শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ১০ টাকা ৬৩ পয়সা। আর সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ৪৫ টাকা ২৪ পয়সা।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। রিজার্ভে রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৪ কোটি সাত লাখ টাকা।