৮৬ শতাংশ কোম্পানির দরপতন, ডিএসইএক্স কমলো ৯৭ পয়েন্ট
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ রোববার (২০ অক্টোবর)। একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমলো ৯৭ পয়েন্ট। আলোচিত এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের তুলনায় এদিন বাজারে মূলধন কমেছে ছয় হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। তবে আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের তুলনায় লেনদেন বেড়ে আজ ৩৬২ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। পরে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমদিকে ডিএসইতে উল্লম্ফন থাকলেও পরে তা ধারাবাহিক পতন শুরু হয় বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সেই পতন এখনও অব্যাহত রয়েছে।
মতিঝিলের লংকাবাংলা, শাকিলসহ পাঁচ সিকিউরিটিজ হাউজের প্রায় ১০ বিনিয়োগকারী বলেন, ধারাবাহিক মন্দায় পুঁজি হারিয়ে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছি। লেনদেন করতেও ভয় পাচ্ছি। কোন শেয়ার বাড়ে বা কোনটা কমে, বুঝা যায় না। বাজার যেন এক অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এতে বাজার প্রতি আমাদের আস্থা তলানিতে যাচ্ছে।
গত দেড় মাসের পতনে পুঁজির প্রায় ৩৫ শতাংশ হারিয়েছি জানিয়ে বিনিয়োগকারী সারোয়ার গাজী বলেন, যতদিন যায়, দেখছি পুঁজি হারানোর পথ প্রশস্ত হচ্ছে। আর কত হারাবো? এখনই এই হারানোতে দিশেহারা আমি।
আরেক বিনিয়োগকারী রাজু আবেদীন বলেন, বর্তমান সরকারের শুরুতে উত্থানে ছিল। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতি উৎসাহ বেড়েছিল। সেই কারণে এই বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করি। এখন দেখছি সেই আশা, আমার খুব ভুল ছিল। সেই ভুলের মাশুল গুনছি। নতুন পুঁজি প্রায় ৩২ শতাংশ হারিয়ে এখন বসে আছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৮ আগস্ট লেনদেন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ৯২৪ পয়েন্ট। কিন্তু আজ রোববার সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৬০ পয়েন্টে। আলোচিত এই সময়ে কমেছে ৭৬৪ পয়েন্ট। গত ৮ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। সেই লেনদেন কমে আজ দাঁড়িয়েছে ৩৬২ কোটি টাকা।
গত ৪ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যেখানে গত মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। গত মঙ্গলবারের এই ধরনের লেনেদন গত দুই মাস ১৩ দিনের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন ছিল। সেখান থেকে কিছুটা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে আরও বেড়ে লেনদেন আজ হয়েছে ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আজ পুঁজিবাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬২ হাজার ৬১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৬০ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ২৫৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইএস সূচক ১৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৫৫ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএস৩০ সূচক ৩৪ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৯৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির ও কমেছে ৩৪৬টির বা ৮৬ দশমিক ৫০ পয়েন্টের। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ২৭টির।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংকের ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, অগ্নি সিস্টেমসের আট কোটি আট লাখ টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ছয় কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এদিন দর কমার শীর্ষে উঠে এসেছে সোনারগাঁ টেক্সটাইলের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে আইসিবির শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে আট দশমিক ৯৩ শতাংশ।