সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেকে অর্থদণ্ডসহ পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দণ্ডিতসহ পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার ছেলে ও ব্যাংকটির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দণ্ডিতসহ আজীবন পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়েছেন।
আজ বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৯৬৫তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংস্থাটির মুখপাত্র মো. আবুল কালাম জানান, সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ছাড়াও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএসইসির সাবেক কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সবধরনের কাজে নিষিদ্ধ, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক শুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করেছে।
অপরদিক ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের উপর উল্লেখিত ‘পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ কর্তৃক পরিচালিত অনুসন্ধান ও তদন্তের অতিরিক্ত কমিশন কর্তৃক তদন্ত পূর্বক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিযুক্ত শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আইএফআইসি গ্যারান্টিযুক্ত শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড শীর্ষক এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও এক কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের গত ১২ জুলাই উহার সম্মতি পত্র ইস্যু করা হয়েছিল। বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড। একই বছরের ২ মার্চ নিগমিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিগমিত হওয়ার পরপরই ওই বছরের ১১ এপ্রিল বন্ডটির ইস্যুর আবেদন করেছিল। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয়/উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল। যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এছাড়া বন্ডটির জামিনদার হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির উপদেষ্টা এবং ব্যবস্থাপক হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড নিরীক্ষক হিসেবে এম জে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংকের উক্ত বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড উক্ত বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে আইএফআইসি আমার বন্ড নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এবিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে। এসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিএসইসির কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।