লোকসানি এনার্জিপ্যাকের দর অস্বাভাবিক, খতিয়ে দেখার অনুরোধ

জ্বালানি ও শক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। লোকসানে থাকা পুঁজিবাজারের এই কোম্পানির শেয়ার দর গত সপ্তাহে কারণ ছাড়াই বেড়েছে ৩২ দশমিক ৭০ শতাংশ। শেয়ারটির দর এতো বৃদ্ধির বিষয়টি ইতোমধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে। তাই শেয়ার দর কেন বৃদ্ধির পাচ্ছে এই বিষয়টি রেগুলেটরদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু আগের সপ্তাহের ২১ আগস্ট শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে পাঁচ টাকা ৫০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়ায় ৪২৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ৩৬০ টাকা। আগের সপ্তাহের ২১ আগস্ট ছিল ৩২৩ কোটি ২৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭২ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১০৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮৮ টাকা।
ইতোমধ্যে শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন কোম্পানিটির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, একটি চক্র কারসাজি করে লোকসানি এই কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়িয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাজার মূলধনও বেড়েছে ১০৪ কোটি টাকা বেশি।
কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কোম্পানিটির এক কর্মকর্তা বলেন, কেন এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ারটির বাড়ছে, সেটা বলতে পাচ্ছি না। শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে কোম্পানির লোকসান পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে। ২০২৪-২০২৫ সমাপ্ত বছরের বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিতে পারবে কিনা, এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ কোম্পানির সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে এখন লোকসানে আছে। তবে আশা করা যাচ্ছে, সমাপ্ত বছরের কোম্পানিটি লোকসান বৃত্ত থেকে বের হতে পারবে। তবে লভ্যাংশ দেওয়ার মতো অবস্থান নাও হতে পারে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা। আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল পাঁচ পয়সা। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে এক টাকা ৯ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১৪ পয়সা। কোম্পানিটির তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৯ পয়সা। আগের অর্থবছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল এক টাকা ৮৯ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির পুনর্মূল্যায়নসহ শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ১৩ পয়সা।
এর আগে ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) রাজধানী রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২২ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ছিল গত ১২ ডিসেম্বর। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল পাঁচ টাকা ১৮ পয়সা। পুনর্মূল্যায়নসহ শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ৩৭ টাকা ৪৫ পয়সা। শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল তিন টাকা ৯৭ পয়সা।
২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৯০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৯ কোটি এক লাখ ৬৩ হাজার ২১৬টি। রিজার্ভে রয়েছে ৩২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৯ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত ২০২৪ সালের জুনের হিসেবে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৯৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রয়েছে।