শিগগিরই নতুন আইপিও রুলস অনুমোদন হবে
ডিএসইর এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর যাত্রায় রয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়, বরং একটি আধুনিক, সেবা ও কাস্টমার- সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, অতীতে একটি আইপিও সম্পন্ন হতে দুই থেকে চার বছর সময় লাগত, এখন সেটি মাত্র ছয় মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। শিগগিরই নতুন আইপিও রুলস অনুমোদন পেতে যাচ্ছে, যা এক্সচেঞ্জকে আরও ক্ষমতায়ন করবে। আইপিও পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসইর নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব কথা বলেন। এদিন বিসিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় বিসিএমইএর সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কাঠামো, প্রক্রিয়া এবং সম্ভাব্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ডিএসই একটি সেন্ট্রাল ডিজিটাল সাবমিশন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে আসাদুর রহমান বলেন, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের পিএসআই, শেয়ারহোল্ডিং ও ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তনসহ সব তথ্য এক জায়গায় জমা দিতে পারবে। দীর্ঘদিন নতুন কোম্পানি লিস্টিংয়ের ঘাটতির কারণে পুঁজিবাজারের সরবরাহপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ডিএসই গুণগতমান সম্পন্ন নতুন কোম্পানি আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
ডিএসইর তিনটি বোর্ডের (মেইন, এসএমই ও এটিবি বোর্ড) মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা ব্যাংক নির্ভর অর্থায়নের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে জানিয়ে আসাদুর রহমান বলেন, ডিএসই এখন ওয়ান-টু-ওয়ান সার্ভিস প্রদানের জন্য প্রস্তুত। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মেইন বোর্ড বা এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হয়, তাদের জন্য ডেডিকেটেড টিমের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম ভিত্তি হলো একটি শক্তিশালী ক্যাপিটাল মার্কেট এবং শিল্পখাতকে এতে সম্পৃক্ত করাই ডিএসইর এই রূপান্তর অভিযানের মূল লক্ষ্য।
বিসিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশিদ বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিএসই বর্তমানে একটি রূপান্তর যাত্রায় রয়েছে। এই যাত্রার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি একটি রেগুলেটরি সংস্থার পাশাপাশি নিজেকে আরও সার্ভিস ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ডিএসইর এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে লিস্টিং প্রক্রিয়া, টাইমলাইন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় করা একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যা বাজারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত পাঁচ দশকে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ইকুইটি ফাইন্যান্সিং এখনো খুবই সীমিত জানিয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে শিল্প বিনিয়োগের প্রায় ৯৮ শতাংশই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়, যা টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে একটি বড় বাধা।
আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, লিস্টিংয়ের নিয়ম ও কাগজপত্রের চেকলিস্ট সংক্ষিপ্ত করা এবং কর ও ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত নীতিমালা আরও বিনিয়োগবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন জানিয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, কমপ্লায়েন্স কস্ট অর্থাত্ ইস্যু ম্যানেজার, অডিটর, এবং অন্যান্য রেগুলেটরি ফি অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এজিএম আয়োজন, রেগুলেটরি সাবমিশন এবং বিভিন্ন ফি কোম্পানিগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ডিজিটাল উদ্যোগ, যেমন অনলাইন এজিএম, হাইব্রিড মিটিং এবং ইলেকট্রনিক ফাইলিং ব্যবস্থা এই জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে।
ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক সাঈদ মাহমুদ জুবায়ের এক প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কাঠামোগত ওভারভিউ, ডিএসইর প্রোডাক্ট সমূহ, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া, এটিবি ও অন্যান্য প্লাটফর্মে মালিকানা হস্তান্তরের তুলনা, তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া, বিভিন্ন ধরণের ইনভেস্টমেন্ট অপশন, তালিকাভুক্তির সুবিধা এবং পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের জন্য চলমান উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন সিরামিক কোম্পানির সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারি।

নিজস্ব প্রতিবেদক