পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে তিনজনের অবস্থান এখনো অজানা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এদিনে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছে পরিবারের ১৭ জনসহ ২০ জন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও এখনো পলাতক রয়েছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থান এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার। এ তিনজন হলো খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন। তবে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
এসব আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সরকার থেকে বলা হয়েছে, পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘একটি কমিশনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা হবে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের দায়ে যারা সর্বোচ্চ আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত, যাদের ব্যাপারে এখনও এই রায় কার্যকর করা যায়নি, তারা পলাতক থাকার কারণে এবং দুজন দুটি দেশে থাকার কারণে তাদের ফিরিয়ে এনে এই রায় কার্যকর করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ যতদিন থাকবে, আমার মনে হয় বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী একজন থাকলেও এই হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে এই রায় কার্যকর করা হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যে চলমান প্রক্রিয়া, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সেটা অব্যাহত আছে।’
বিদেশে পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগে কোনো ঘাটতি রয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো শিথিলতা নেই এবং তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এই চলমান প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশদ কিছু বলতে গেলে তাতে ব্যাঘাত হতে পারে।’
পলাতক পাঁচ আসামি
ইতিহাসের বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থান এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার। এ তিনজন হলো- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন। এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
ফাঁসি কার্যকর যাদের
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ যারা শহীদ হন
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মেজ ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত ও ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু ও আত্মীয় বেন্টু খান, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক ও এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।