ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হামাসের আহ্বান
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রাখায় যুদ্ধবিরতি এগোতে পারবে না। পাশাপাশি গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার পর এই যুদ্ধবিরতি অন্তত ৭৩৮ বার লঙ্ঘিত হয়েছে।
হামাসের কর্মকর্তা হুসাম বাদ্রান মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা তাদের বিদ্যমান প্রতিশ্রুতিগুলো সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে।
বাদ্ৰান বলেন, ‘যতদিন (ইসরায়েলি) দখলদারিত্ব চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রাখবে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি এড়িয়ে চলবে, ততদিন পরবর্তী ধাপ শুরু হতে পারে না।’
১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি মূলত গাজায় আটক ইসলায়েলি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার নিয়ে ছিল।
তবে পরবর্তী ধাপের মধ্যে গাজার ভবিষ্যতের প্রশাসন, একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর সম্ভাব্য মোতায়েন এবং একটি ‘বোর্ড অফ পিস’ নামে অভিহিত কাঠামোর প্রতিষ্ঠা – এই বিষয়গুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন—থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের সংঘর্ষ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা
এদিকে, ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি আক্রমণে অন্তত ৩৭৭ জন নিহত এবং ৯৮৭ জন আহত হয়েছেন।
আলোচনা এগোচ্ছে, কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
একজন মার্কিন কর্মকর্তা আলজাজিরা আরবিকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ বাধাগুলি এখন অতিক্রম করতে হবে।
ওই কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন আশা করছে, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর মোতায়েন ২০২৬ সালের গোড়ার দিকে শুরু হবে। বর্তমানে কোন কোন দেশ এই বাহিনীতে অবদান রাখবে, কীভাবে এটি পরিচালিত হবে এবং এর নিয়োজিত হওয়ার নিয়মাবলী কী হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে দৃশ্যত ‘বোর্ড অফ পিস’ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি ছিল গাজার পুনর্নির্মাণ কাজের তদারকির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত একটি প্যানেল।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত ও মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণের কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, গাজার স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্য থেকে একটি পুলিশ বাহিনী গঠনের জন্যও আলোচনা চলছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মানবিক সহায়তা সামগ্রীর প্রবেশাধিকারের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা সম্পর্কেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবগত এবং সাহায্য বিতরণে বাধা দূর করতে কাজ করছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক ইসরায়েলি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জমির-এর একটি দাবির জবাব দিয়ে বলেছেন, তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ বর্তমানে গাজার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলকে চিহ্নিত করছে এবং তা একটি ‘নতুন সীমান্ত’ তৈরি করছে।
আরও পড়ুন—চীনের কাছে এআই চিপ বিক্রিতে এনভিডিয়াকে সবুজ সংকেত ট্রাম্পের
হলুদ রেখা থেকে আংশিক প্রত্যাহারের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় ৫৮ শতাংশ অঞ্চলে রয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর অঞ্চলটি থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার কথা, যদিও চুক্তিতে প্রত্যাহারের জন্য কোনো সময়সীমা নেই।
আরও ইসরায়েলি হামলার খবর
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী খান ইউনিসের যে অঞ্চলগুলো এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেখানে বিমান হামলা ও আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া, উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেইত লাহিয়াতে ভবন ভাঙার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
গাজার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই তৎপরতা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধবিরতির মূল ভাব এবং এর সাথে সংযুক্ত মানবিক প্রোটোকলকে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করেই এর মূল লক্ষ্য।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যায় গাজায় অন্তত ৭০ হাজার ৩৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৪ জন আহত হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক