টিসিবির পণ্যবিক্রির কার্যক্রমে নজরদারির আহ্বান
নিত্যপণ্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে নিরুপায় হয়ে সাধারণ মানুষ টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকে ভিড় জমাচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা সমাজের অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য সরকার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে টিসিবি কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নজরদারির দুর্বলতার কারণে যুগান্তকারী এ উদ্যোগের সুফল সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না।
আর, ট্রাক সেল বাড়ানোর দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হলেও টিসিবির ট্রাক সেলকে নাগরিক পরিবীক্ষণের আওতায় আনার দাবি করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতারা। টিসিবির লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেকের ফিরে যাওয়া, টিসিবির পণ্য সাধারণ দোকানে বিক্রিসহ ট্রাক সেলে নানা অব্যবস্থাপনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ক্যাবের নেতারা।
বিবৃতিতে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মেজবাহ উদ্দীন তুহিন, তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘সংকটকালীন সময়ে টিসিবির ট্রাক এখন সাধারণ মানুষের ভরসার অন্যতম স্থলে পরিণত হলেও প্রতিটি ট্রাকে কী পরিমাণ পণ্য থাকছে, কতজনের কাছে বিক্রি করা যাবে, তার কোনো নজরদারি টিসিবি বা সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। ফলে, টিসিবির ডিলার তাঁর ইচ্ছেমতো বিক্রি করছেন। এতে লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ মানুষই শেষ পর্যন্ত পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। অনেক জায়গায় হাতাহাতি ও চুলোচুলির ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রমটি নাগরিক পরিবীক্ষণের আওতায় আনা দরকার, যেখানে ভোক্তাদের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি রাখা দরকার।’
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা আরও বলেন, ‘ক্যাব থেকে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে ট্রাক সেলের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করা হলেও টিসিবি সে বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। ঢাকায় ১০০টি ট্রাক সেল হলে চট্টগ্রামে আনুপাতিক হারে ৫০টি হওয়া দরকার। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী হওয়ার কারণে চট্টগ্রামে শ্রমিক ও নিম্নআয়ের বিপুল লোক বসবাস করে। সম্প্রতি ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এসব পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ টিসিবির ট্রাক সেলের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্যের জন্য স্বস্তির ঠিকানা হয়েছে টিসিবি। টিসিবির পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে তারা জীবনযাত্রার ব্যয়কে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জনসংখ্যা ও নিম্নআয়ের ঘনত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম নগরীতে ১৭টি স্থানে ট্রাক সেল কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। অনেক স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি না করে বাইরে খোলা বাজারে বিক্রির ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে বরাদ্দকৃত পণ্যের চেয়ে কম পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠছে। জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারের কোনো পক্ষ থেকে ট্রাক সেলের কার্যক্রমটি মনিটরিং করা হচ্ছে না। ফলে ডিলাররা তাদের ইচ্ছামতো পণ্য বিক্রি করছে। ট্রাক সেল প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে শুরু করার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় দুপুর গড়িয়ে যায়। ফলে নগরীর সবকটি ট্রাক সেল পয়েন্টে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব পণ্য ক্রয় করতে ভোক্তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার দেখা যায় যে বিক্রি করা পণ্য প্যাকেট করার নামে সাধারণ ক্রেতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অথচ পণ্যগুলো বিক্রির আগে প্যাকেট করে রাখলে জনগণের এ ভোগান্তি হতো না। আবার পণ্য শেষ হওয়ার কথা বলে বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাচ্ছে না।’