ফ্রিজ বেঁচতে অফার বেশি, ক্রেতা কম
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ফ্রিজ বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু বিক্রির লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না বলে দাবি কোম্পানিগুলোর। তাদের দাবি, এই মৌসুমে গতবারের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। সরবরাহ বেশি। ফ্রিজের দাম তুলনামূলক কমেছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বেশি অফার দেওয়া হয়েছে। তবে সে তুলনায় বিক্রি বাড়ছে না। ফলে লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছে কোম্পানিগুলো।
সাধারণত প্রতি ঈদ মৌসুমে নগদ ছাড়, পুরস্কার ঘোষণা থাকায় ফ্রিজের চাহিদা বাড়ে। গত বছরের মতো এবার রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় অনেকটাই আশাবাদী ছিলেন কোম্পানি-সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন কোম্পানি ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে শতভাগ ছাড়সহ বিভিন্ন রকমের উপহার ঘোষণা করেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাসায় পৌঁছানোর খরচ দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সে অনুপাতে বিক্রি বাড়ছে না বলে দাবি করছেন কোম্পানি-সংশ্লিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ালটন, সিঙ্গার, এলজি বাটারফ্লাই, সনি র্যাংস, হিটাচি, সোলারভিশন, শার্প, ট্রান্সকম, মাইওয়ান ও যমুনাসহ আরো অনেক কোম্পানির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। দেওয়া হচ্ছে নগদ ছাড়, নানা উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন লোভনীয় অফার।
রাজধানীর ইস্কাটনে সিঙ্গার বাংলাদেশের শাখা ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিঙ্গার বাংলাদেশ প্রতিবারের ন্যায় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ফ্রিজে স্ক্যাচ কার্ডের অফার দিয়েছে। নগদ টাকা থেকে শুরু করে ফ্রি পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। কোম্পানিতে সাড়ে ৮ সেপটি থেকে শুরু করে ২৬ সেপটি পর্যন্ত ফ্রিজ রয়েছে। ঈদে ক্রেতাদের কিস্তির সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।’
রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যে হারে বিক্রির কথা ছিল, সে তুলনায় কম বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এর পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। আমরা আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী কয়েক দিনে বিক্রির পরিমাণ আরো বাড়বে। ২০১৩ সালের ঈদ আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ছিল।’
ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ীদের মতে, শো-রুমে অনেক ধরনের পণ্য থাকলেও বেশ কিছু পণ্যে মৌসুম ভেদে ব্যবসা হয়। ঈদুল আজহার সময় অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কম থাকে। আর ফ্রিজ বিক্রি করে সেই ঘাটতি পূরণ হয়। সারা বছর ফ্রিজের বিক্রি যাই হোক, ঈদুল আজহার সময় ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা যায়।
কয়েক বছরে দেশীয় ও নিম্নমানের কোম্পানির ফ্রিজ উৎপাদন ও আমদানি বেড়েছে। এ সময়ে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। এ শ্রেণির মানুষের ফ্রিজ চাহিদা মাথায় রেখে কোম্পানিগুলো ফ্রিজ ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর মগবাজারে ওয়ালটন শোরুমে আজ সোমবার ফ্রিজ কিনতে আসা নূরনাহার বেগম বলেন, ‘অনেকদিন ধরে ফ্রিজ কেনার পরিকল্পনা করছিলাম। কোরবানির ঈদে কোনো না কোনো অফার থাকে। তাই দুই মাস আগে কেনার কথা থাকলেও আজ কিনলাম। এখন প্রায় দুই হাজার টাকা কমে পেয়ে আমি খুশি।’
বাংলামোটরে এলজি বাটার ফ্লাই শো রুমের ব্যবস্থাপক ফেরদৌসি আক্তার বলেন, ‘কোম্পানি সারা দেশে ২২০টি শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের ফ্রিজ বিক্রি করছে। সাড়ে ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা দামের ফ্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া ১০০ থেকে ৩১০ লিটার পর্যন্ত ডিপ ফ্রিজের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য ৬ থেকে ২৫ শতাংশ নগদ ডিসকাউন্ট সুবিধার সাথে রয়েছে কিস্তি সুবিধা। তবে বৃষ্টি ও ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
রাজধানীর পল্টনে সনি র্যাংগসের শো রুমের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহক আমাদের পণ্যগুলো কিনে থাকে। তারপরও ঈদের একটি চাপ থাকেই। সনি র্যাংগসের প্রায় ২০টি মডেলের বিভিন্ন রং ও আকারের ফ্রিজ রয়েছে। এগুলো আকার ভেদে ৫ সিএফটি থেকে ১৮ সিএফটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিস্তি সুবিধা নেই, তবে নগদ দামে রয়েছে ছাড়। এই সময়ে বিক্রি আশানুরূপ নয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো বেচাকেনার আশা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ঈদ মৌসুমের বিক্রির লক্ষ্যের মাত্র এক-চতুর্থাংশ পূরণ হয়েছে।’
তবে এই এই মৌসুমে হিটাচির পণ্যে কোনো পুরস্কার ও ছাড় নেই। সাড়ে ৮ থেকে শুরু করে ৩০ সিএফটি পর্যন্ত ফ্রিজ রয়েছে। এগুলোর মূল্য ৪১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ।