ভারত থেকে আমদানি, পাবনায় ৮০ ভাগ চাতাল বন্ধ!
ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পাবনা জেলার আট শতাধিক চাতালের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মিল মালিক-শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো চাতাল বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাবনা জেলা চাতাল মিলমালিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ধানের দাম গত দুই মাসে ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় এক ট্রাক ধান ভাঙিয়ে চাতালমালিকদের ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। ৮১১ চাতাল মিলের মধ্যে এরই মধ্যে ৬৫০টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
ঈশ্বরদীর বিভিন্ন চাতালমালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হরতাল-অবরোধ ও পরিবহন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন চাল বিক্রি করা যায়নি। আমন মৌসুমের ধান এখনো কৃষক ও চাতাল মালিকদের গুদামে মজুদ রয়েছে। আর ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশি চালের চাহিদা কমেছে। গো-খাদ্যের নামে কম দামে চাল আমদানি করায় দেশের ধান ও চালের দাম ব্যাপক হারে কমে গেছে। এতে মিলমালিকরা বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে। মিল বন্ধ করা ছাড়া ব্যবসায়ীরা কোনো উপায় দেখছে না।
স্থানীয় চাতাল ব্যবসায়ী সাদেক আলী বিশ্বাস বলেন, লোকসানের আশঙ্কায় কেউই ঝুঁকি নিয়ে ধান ভাঙাতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে ঈশ্বরদীর চালের মোকামে কর্মরত প্রায় ২০ হাজার মিলমালিক, ধান-চাল ব্যবসায়ী ও চাতাল শ্রমিক বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছে। এসব চাতাল শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেকই নারী শ্রমিক বলে জানান তিনি।
মিলমালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে গুটি স্বর্ণা ধান ৭০০-৭৫০ থেকে নেমে ৫৯৫-৬০০ টাকা, সুমন স্বর্ণা ৭১৫-৭২০ থেকে নেমে ৬০০-৬২৫ টাকা, ব্রি-৪৯ ধান ৮০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা, ব্রি-৩৯ ধান ৮০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, পারিজা ধান ৭০০-৭৫০ টাকা থেকে ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ধানের বাজার গত মৌসুমের শুরুতে ৯০০ টাকা মণ থাকলেও বর্তমানে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের ধান এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধানের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় নেমে আসতে পারে বলে শংকা করা হচ্ছে।
পাবনা চাল মিল সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা চালের দাম দেশের উৎপাদিত চালের চেয়ে অনেক কম। আমদানি করা চাল বস্তাপ্রতি যেখানে লাগে এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, সেখানে দেশীয় চাল বস্তাপ্রতি এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুব হাজার টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১০/১২ টাকা কম দামে ভারতের চাল কিনতে পারছে ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের দেশীয় চালের প্রতি ঝোঁক না থাকায় মিলগুলো অচল হয়ে পড়ছে। চাল ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে হলে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করলেই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
একদিকে চাল আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার চাল রপ্তানিও করছে। এ দ্বৈত নীতির কারণে দেশে কৃষক, চাতাল মালিক, ধান-চাল ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ চাতাল ব্যবসায়ীদের।
চাল আমদানির বিষয়ে চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খাতা কলমে চাল আমদানির কোনো তথ্য নেই। পশু খাদ্যের নামে ভারত থেকে চাল আমদানি করে বাজার সয়লাব করায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের কৃষক, হাসকিং (ক্ষুদ্র শিল্প) মিল মালিক, ধান-চাল ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে অবৈধ পন্থায় চাল আমদানির বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। যেখানে আমাদের চাল মজুদ রয়েছে, সেখানে সরকার কেন চাল আমদানি করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।