রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গরুর মাংসের দাম, নিরুপায় ক্রেতা
দাম বেড়ে যে আকাশে উড়বে আর নামবে না এমনটা ভাবনা ছিল না কারও। যেমনটা দেখা গেল গরুর মাংসের ক্ষেত্রে। এর দাম নিয়ন্ত্রণ আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সরকার কমাতে পারেনি। ভাঙতে পারেনি গরুর মাংস বিক্রেতারদের সিন্ডিকেট। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের আগের প্রতি কেজি সাড়ে ছয়শত টাকার গরুর মাংস বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাশি মাংস। পাশাপাশি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মুরগি দাম। বাজারভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। আজ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। নাড়ির টানা ব্যস্ত শহর ছেড়েছেন গ্রামমুখী মানুষ। অনেকেটা ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। নিস্তব্ধ ঢাকায় অবস্থান করা মানুষগুলো ভিড় জমিয়েছে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারগুলোতে। ঈদে পরিবার ও অতিথিদের পাতে একটু ভালো খাবারের লক্ষে ছুটছেন এক বাজার থেকে অন্য বাজারে। তাদের সবারই পছন্দের খাবার তালিকায় রয়েছে গরুর মাংস। তাই এদিনে পরিবার ও অতিথিদের আপ্যায়নে মাংসের রেসিপি রাখতে কসাইয়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
চড়া দাম হলেও পরিবারের সদস্য ও অতিথিদের পাতে খেতে দিতে চাই গরুর মাংস জানিয়ে তৌহিদ বলেন, আমি গরুর মাংস খেতে খুবই পছন্দ করি। তাই ঈদের আপ্যায়নে রাখতে চাই গরুর মাংসের রেসিপি। এজন্য কারওয়ানবাজারে এসেছি। সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেখছি মাংসের দাম চড়া। এখানে (কারওয়ান বাজার) তাদের পছন্দমতো প্রতি কেজি মাংসের দাম চাচ্ছে ৭৬০ টাকা। আমার পছন্দমতো গরুর মাংসে দাম আরও বেশি চাচ্ছে। খাসি চাচ্ছে ১২০০ টাকা। অন্য একটি দোকানে চাচ্ছে সাড়ে ১১০০ টাকা। অবশ্য আমি যেখানে থাকি, সেখানে গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকার বেশি। খাশি ও মুরগির দামও বাড়তি।
বাজারে মাংস কিনতে আসা সোলায়মান বলেন, ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা। ভেবেছি দাম কম হবে। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো। গতকাল থেকে আজ সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে। গরুর দাম কেজিতে আজ ২০ টাকা বাড়তি দেখছি। মুরগিও কেজিতে ৩০ টাকা বাড়তি। কয়েকটি বাজার ঘুরেছি। বাজার ভেদে মাংসের দামের ভিন্নতাও পাওয়া গেছে। তবে সাশ্রয় দামে বিক্রি করছে কাওরানবাজারে।
মাংসের দাম বাড়েনি দাবি করে কারওয়ানবাজারের মাংস ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, গতকালের তুলনায় আজ ক্রেতা খুবই কম। গতকাল গরুর মাংস কেজি প্রতি সাড়ে সাতশ টাকা বিক্রি করেছি। আজও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী আবিদ বলেন, গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৬০ টাকায় বিক্রি করছি। কারণ আমাদের গরুগুলো বেশি দামে কেনা হয়েছে। এই সাড়ে সাতশর নিচে বিক্রি করে পোষাতে পারছি না। তারপরও নিরুপায় হয়ে সামান্য লাভে বিক্রি করছি। গতকালের তুলনায় আজ ক্রেতা কম জানিয়ে জনপ্রিয় খাশির দোকানে বিক্রেতা বলেন, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি করছি।
কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ী হোসাইন বলেন, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৭০ টাকায় বিক্রি করছি। খাসি মাংস প্রতি কেজি সাড়ে ১২০০ টাকা। সরবরাহ কম থাকায় গতকাল থেকে আজ প্রতি কেজিতে কিছুটা বাড়তি জানিয়ে জননী মুরগি, মা বাবার দোয়াসহ আরও চারটি দোকানের বিক্রেতারা বলেন, ব্রয়লার বিক্রি করছি প্রতি কেজি ২৬০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি করছি ৩৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি সাড়ে ছয়শ টাকার বেশি। গতকাল কিছুটা কমে বিক্রি করেছি।
এদিকে গরুর মাংসের দাম বাড়া নিয়ে খামারিদের দুষছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বড় খামারিদের কারসাজিতে বাজারে গরুর মাংসের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পাচ্ছে না। দুর্মূল্যের এ বাজারে স্বল্পমূল্যে যারাই গরুর মাংস বিক্রি করতে চাচ্ছেন, তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খামারিদের অসাধু চক্র। একদিকে কোরবানিকে কেন্দ্র করে বাজার থেকে গরু উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকি আর চাপ এসে হাজির হচ্ছে স্বল্পমূল্যের বিক্রেতাদের জীবনে। খামারিদের এই সিন্ডিকেট ভাঙা গেলে ৫০০ টাকায়ও গরুর মাংস কিনতে পারতো ক্রেতা সাধারণ।