ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের চিঠি, তুলে ধরলেন এস আলমের দুর্নীতি
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক মো. শহীদুল ইসলামও। ওই চিঠিতে এস আলমের দুর্নীতি বর্ণনা করে ব্যাংকটি রক্ষায় তিনটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার ও মো. শহীদুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গ্রাহকদের আস্থা ও স্বার্থ রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট সহচর এস আলম গ্রুপ। তারা ২০১৭ সালে ৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় অবৈধভাবে ব্যাংক দখল করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কোনো শেয়ার ছিল না। ২০১৬ সালে সাতটি অস্তিত্বহীন শেল কোম্পানি নিয়ে ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ শেয়ার নেয়, যা বর্তমানে প্রায় ৮২ শতাংশ শেয়ার। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব নির্দিষ্ট সার্কুলার, লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগই সাইফুল আলমের নিজের পটিয়া উপজেলার। ২০১৬ সালে ব্যাংকে কর্মকর্তা ছিল ১৩ হাজার ৫৩৯ জন, যা ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে ২০২০ সালে ২০ হাজার ৮০৯-এ তুলে আনা হয়। পাশাপাশি এস আলম গ্রুপ অস্তিত্বহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের নামে-বেনামে অত্যন্ত অনৈতিকতার ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। বিভিন্ন কায়দায় অনেক বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে। ফলে বাংকের নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের পতন ঘটে।
এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, আল-রাজি গ্রুপ, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিতে হয়।
এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৫২ শতাংশের মতো, যা এখন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
চিঠিতে গভর্নরের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার ও ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম। সেখানে তিনটি দাবি তোলা হয়। সেগুলো হলো—নামে বেনামে ক্রয় করা ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার যাতে অন্য কোথাও হস্তান্তর করতে না পারে দ্রুত সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংকের সম্পদ লুটপাটের তথ্য অবিলম্বে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা; বর্তমান দখলদার পরিচালনা পর্ষদ অনতিবিলম্বে বাতিল করে ওই স্থানে পূর্ববর্তী ২০১৩ সালের মতো সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও সক্ষম পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা।