কোম্পানির নয়, ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংক
শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পর বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হলেও তাদের মালিকানাধীন বা সংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ করা হয়নি। গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র (চলতি দায়িত্ব) মহুয়া মহসীন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএফআইইউ কর্তৃক স্থগিত হিসাবের লেনেদেন বিষয়ে স্পষ্টীকরণ প্রসঙ্গে এক ব্যাখ্যায় মহুয়া মহসীন বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট, সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট এবং বিএফআইইউতে দাখিল করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৩ (১) (গ) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মানি লন্ডারিং অপরাধ সন্দেহে কতিপয় ব্যক্তি ও একক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবের লেনদেন স্থগিতের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।’
মহুয়া মহসীন আরও বলেন, ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উক্ত নির্দেশনার বাইরেও ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির হিসাবগুলোর লেনদেন স্থগিত করেছে। ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন প্রদান ও অনেক ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট লেনদেন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের কার্যক্রম অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এর ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। বিষয়টি স্পষ্টীকরণের নিমিত্ত, সবার অবগতির জন্য এ মর্মে জানানো যাচ্ছে, বিএফআইইউ কর্তৃক সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি ও একক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাব ব্যতীত ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়নি।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে জানিয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, এরপর কোনো কোনো ব্যাংক সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই সেসব ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে। এতে কোম্পানিগুলোর দৈনন্দিন লেনদেন ও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। একইসঙ্গে বেতন-ভাতা পরিশোধ, আমদানি-রপ্তানিসহ অন্য কোম্পানির সঙ্গেও লেনদেনে নানা রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত রোববার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়নি। কেউ অনিয়ম করলেও তার প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব চালু রাখা হয়েছে, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। এ বিষয়ে সুযোগসন্ধানীরা নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে ঋণ ও অর্থপাচার নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর বিএফআইইউ বেশ কয়েকটি আলোচিত ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের মালিক ও অংশীদারদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। দেশের বাইরে এসব ব্যক্তি কত টাকা পাচার করেছে তা নিয়েও অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি।’