দেশের সব ব্যাংক থেকেই অনলাইন ও অফলাইনে সহজে টাকা জমা ও তোলার সুযোগ আছে। এটি লেনদেন প্রক্রিয়াকে খুব সহজ করে তোলে। বিশেষ করে এটিএম বুথের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা টাকা জমা ও তোলার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহক। কিন্তু ঈদের ছুটিতে সেই এটিএম বুথ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, চলছে চরম ভোগান্তি। বুথ থেকে বুথ ঘুরেও নগদ টাকা মিলছে না— এমন অভিযোগ গ্রাহকদের। তাদের অভিযোগ— ছয়-সাতটি এটিএম বুথ ঘুরে যা নগদ টাকা মিলছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি (৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত)। এই ছুটিতে ব্যাংকগুলোও বন্ধ। তবে বন্ধ হলেও ২৪ ঘণ্টা এটিএম বুথে সেবা পাওয়ার কথা। কারণ নগদ টাকা তোলার একমাত্র বাতিঘর ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ। সেই এটিএম বুথে মিলছে না পর্যাপ্ত টাকা। অন্য ব্যাংকের বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহক। এছাড়া অনেক বুথে নো ক্যাশ বা আউট অব সার্ভিস সাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নগদ টাকার পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিটি এটিএম বুথে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ জরুরি ভিত্তিতে টাকার রিফিল রাখার দাবি জানাচ্ছেন ব্যাংক গ্রাহকরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রাহকদের নির্বিঘ্নে অর্থ লেনদেনের সুযোগ দিতে দেশের ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সরবরাহের নির্দেশ ঈদের আগেই দেওয়া হয়েছে। এটিএম বুথে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা মজুত যাতে থাকে, তার সব ধরনের ব্যবস্থা ঈদের আগেই করে দেওয়া হয়েছে।

এই নির্দেশ না মানলে কঠোর হবে বাংলাদেশ ব্যাংক— এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ছুটিতে যেসব ব্যাংক তাদের বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা মজুত রাখেনি এবং অর্থ শেষে পর সঙ্গে সঙ্গে রিফিলের ব্যবস্থা করছে না— এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এটিএম বুথে গ্রাহকদের হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

চাঁনখারপুলের বেশিরভাগ এটিএম বুথে টাকা নেই— এমন আক্ষেপ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার হুমাইয়া রশিদ নামে এক গ্রাহক বলেন, মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। এখন মায়ের পাশে আমার থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু থাকতে পারছি না। টাকার প্রয়োজেন বুথ থেকে বুথে ঘুরছি। কিন্তু কোথায়ও টাকা পাচ্ছি না। পরে ছয়টি এটিএম বুথ ঘুরে সাতটির বেলায় এসে টাকা তুলেছি। এতে আমার অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।

এটিএম বুথে টাকা তুলতে নানা সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে শ্যামলীর বাসিন্দা সৈয়দ রিয়াদ বলেন, আজ সকাল ৯টা থেকে পাঁচ ব্যাংকের এটিএম বুথে থেকে নগদ টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। বেশিরভাগ বুথে টাকা নেই। আবার কোনোটায় রয়েছে নেটওয়ার্ক সমস্যা। এছাড়া এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে মিলছে না নগদ টাকা। এক কথায় নানা অজুহাতে টাকা না পেয়েই বুথ থেকে ফিরতে হচ্ছে। বাবা অসুস্থ। জরুরি নগদ টাকা লাগবে। অনেক কষ্টের পর একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দশ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। বাকিটা আত্মীয়-স্বজন থেকে ধার নিয়েছি।

শাহবাগ মোড়ে শাকিল আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি যে ব্যাংকের গ্রাহক সেই ব্যাংকের এটিএম বুথ হাতেগোনা কয়েকটি। সাধারণত এই ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে থাকে। আমিও নগদ টাকা তুলতে অন্য বাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করি। বেলা ১২টায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারি নাই। অন্য একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে যাই। সেখানেও টাকা তোলা যাচ্ছে না। পরে আরেকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে থেকেও টাকা তুলতে ব্যর্থ হই। এই সমস্যা শুধু আজকের না। ঈদের পর থেকেই এই সমস্যা হচ্ছে। নগদ টাকার জন্য প্রতিদিনই চেষ্টা করছি, কিন্তু তুলতে পারছি না।

সাত-আটটি এটিএম বুথ ঘুরলে একটিতে টাকা মিলছে— এমনটা জানিয়ে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আকলিমা আক্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগদ টাকা তুলতে চেষ্টা করছি এলাকার এটিএম বুথগুলোতে। কিন্তু পারিনি। কারণ বুথে টাকা নেই ও নেটওয়ার্ক সমস্যা। আজ সকালে পল্টনে আসছি টাকা তুলতে। দেখি এখানের এটিএম বুথগুলোরও একই অবস্থা। ছয়টি এটিএম বুথ ঘুরে পরে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পেরেছি। তাও প্রয়োজনের তুলনায় কম।

বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ অনেক ব্যাংক মানছে না জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখা নির্দেশ মাঠপর্যায়ে অনেক ব্যাংক মানছে না— মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ আসছে। ছুটির শেষে অফিস শুরু হলে তখন লিখিত অভিযোগ হাতে পাব। তখন অভিযোগ নিয়ে কাজ করব।

গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দেয়, ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রাহকদের নির্বিঘ্নে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ দিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে তাদের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদের আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দেয়, যেন বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা মজুত রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক রিফিলের ব্যবস্থা থাকে।