বিদেশি টেলিকম অপারেটরের সুবিধায় বৈষম্যের শিকার দেশীয় উদ্যোক্তারা: আইএসপিএবি সভাপতি
বিদেশি টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে তুলনা করলে আইএসপি খাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম।
তিনি বলেন, টেলিকম অপারেটরদের ৬৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ থাকে, তারা প্রতিটি লেয়ার ও ডোমেইনে কাজ করতে পারবে; অথচ আমরা ১০০ শতাংশ দেশীয় বিনিয়োগ করে অন্য ডোমেইনে কাজ করতে পারব না-এটা বড় ধরনের বৈষম্য। আমরা সব ডোমেইনে কাজ করতে চাই না, তবে এই বৈষম্য দূর হওয়া জরুরি।
আজ শনিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল হলিডে ইনে ‘দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে টেলিযোগাযোগ খাতের নতুন নীতি কতটা ভূমিকা রাখবে’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন আইএসপিএবি সভাপতি।
আমিনুল হাকিম বলেন, নীতিমালায় আমাদের ফিক্সড ও মোবাইল অপারেটরদের ‘সেলুলার’ বলা হলেও গাইডলাইনে তাদের বাসা-বাড়িতে ওয়্যারলেস ফিক্সড সেবা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের বলা হয়েছে আমরা ফিক্সড সেবা দেব।
দেশে প্রাইভেট সাবমেরিন ক্যাবল আসতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান আমিনুল হাকিম। তিনি বলেন, অথচ প্রাইভেট সাবমেরিন ক্যাবল দেশে এলে এখন যেসব ইন্টারনেট প্যাকেজ আমরা গ্রাহককে দিচ্ছি, তখন দ্বিগুণ দেওয়া সম্ভব। এখনকার দামেই।
দেশের ইন্টারনেট খাতে বর্তমানে প্রায় ২,৫০০ ছোট-বড় উদ্যোক্তা কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, নতুন গাইডলাইনে স্টারলিংকসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ফি ১২ লাখ টাকা, কিন্তু দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বক্তারা বলেন, সেলুলারের সঙ্গে ফাইবার যুক্ত করে পুরো লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াকে মোবাইল অপারেটরদের জন্য ‘ইউনিফায়েড লাইসেন্স’ পরিণত করা হচ্ছে, যা দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য আরও বিপর্যয়কর হবে।
টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী সভায় খাতভিত্তিক একটি কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন। সভার সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
বক্তারা বলেন, নতুন খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে আইএসপিদের লাইসেন্স ফি বেড়ে যাবে পাঁচগুণ, যেখানে ৯০ শতাংশ সুবিধাভোগী হবে বিদেশি অপারেটর, আর ৮৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশীয় উদ্যোক্তা। নতুন গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিকাশ, জিডিপি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া উচিত নীতির মূল লক্ষ্য জানিয়ে সভায় বক্তরা বলেন, নতুন গাইড লাইনে আমাদের মতামত রাখা হয়নি। বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা। বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে ছোটরা টিকতে পারবে না।
সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট মাসুদ কামাল বলেন, লাভজনক সব খাতই বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার। শুনছে সবাইকে, কিন্তু নিজের মতই করছে। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত পরিবর্তনের আশা করা কঠিন। তিনি বলেন, ‘ইউনুস সাব ক্ষমতায় আসার সময় বলেছিলেন, আপনারা প্রাণ খুলে সমালোচনা করুন। এরপরে তিনি আরেকটি কথা বলেছেন, সেটা আমরা শুনিনি। তা হলো-আপনারা যতই সমালোচনা করুন আমি শনবো না। এখন তা-ই হয়েছে। আপনারা যা বলেবেন তিনি শুনবেন না।’
সভায় বক্তরা প্রশ্ন রাখেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত সংস্কার না করে টেলিযোগাযোগ খাতকেই আগে কেন সংস্কারের আওতায় আনা হলো?
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, আইসিএক্সের এম নূরুল আলম, আইওএফ এর সিওও মুশফিক মাঞ্জুর, বাহন লিমিটেডের সিটিও রাশেদ আমিন, সামিট কমিউনিকেশনের সিটিও কে এম তারিকুজ্জামান, ফাইবার এট হোমের ডিএমডি সুমন আহমেদ সাবির, এবং অন্যান্য খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক