চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সে স্থবিরতা, ঘুরে ফিরে একই নেতৃত্ব
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। জেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান বাজার এলাকায় অবস্থিত এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বা সমস্যা সমাধানে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হতাশ।
ব্যবসায়ী মহলের অভিযোগ, ঘুরে ফিরে একই ব্যক্তিরা বছরের পর বছর চেম্বারের নেতৃত্বে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি কয়েকজনের ব্যক্তিগত প্রভাব বলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে চেম্বার তার মূল উদ্দেশ্য—ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন, বাজার স্থিতিশীলতা রক্ষা ও রপ্তানি-আমদানি খাতের সম্প্রসারণ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
আলমগীর পাটোয়ারী নামের এক সদস্য বলেন, ‘চেম্বার অব কমার্স এখন কিছু মানুষের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। বছরে কয়েকটি সভা-মিটিং করেই দায়িত্ব শেষ করে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের বাস্তব সমস্যার দিকে কারও নজর নেই।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন কমিটির মাধ্যমে চেম্বারের কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।
আরও পড়ুন : আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ
ব্যবসায়ীদের একটি অংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা নেতৃত্বের টানাপোড়েন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে চেম্বারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি না থাকায় টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নতুন নেতৃত্ব গঠনের উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।
বর্তমানে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের ২০২৪-২৫ পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। এই কমিটিতে দীর্ঘবছর ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম। তবে অসুস্থতার কারণে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি অনুপস্থিত এবং বর্তমানে সুভাষ চন্দ্র রায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর চেম্বারের কার্যক্রমে আরও ধস নামে। যেখানে আগে সদস্য সংখ্যা চার শতাধিক ছিল, সেখানে এখন মাত্র ২৫৮ জন সদস্য রয়েছেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সদস্য পদ নবায়ন করা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন : মুন্সীগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবক নিহত, গুলিবিদ্ধ ১
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি তমাল কুমার ঘোষ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ভালো থাকলে চেম্বারের কার্যক্রম ভালো থাকে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সবকিছুতেই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ব্যবসায়িক মন্দার কারণে সাংগঠনিক কাঠামোও ঝিমিয়ে পড়েছে।’ সদস্য সংখ্যা কমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার চেম্বার সদস্যদের ফি কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। যে কারণে পুরোনো সদস্যরা নতুন করে নবায়ন করছে না এবং নতুন কেউ সদস্য হচ্ছে না। আমরা ফি কমানোর জন্য ইতোমধ্যে দাবি জানিয়েছি। মফস্বল পর্যায়ে চেম্বারগুলো টিকিয়ে রাখতে এই বিষয়টি দেখতে হবে। তখনই আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত হবে।’
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। আগে কী হয়েছে সেটি নাই বললাম। সামনে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর