জাবিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ রিকশার অনুমতি থাকলেও, সেগুলো সংখ্যায় কম থাকায় বাড়ছে ভোগান্তি। এতে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে অংশ নিতে পারছেন না ক্লাস ও পরীক্ষায়।
ভোগান্তির সঙ্গে গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ সব সমস্যা দূর করতে শিক্ষার্থীরা বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও গুরুত্ব দেয়নি জাবি প্রশাসন। বাড়ানো হয়নি চক্রাকার বাসের সংখ্যা, নেওয়া হয়নি সময়োপযোগী নীতিমালা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ব্যাটারিচালিত দুই রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় জাবি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ সিফাত বলেন, ‘বর্তমানে প্যাডেলচালিত রিকশার সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এসব রিকশায় যাতায়াত করতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর পাওয়া যাচ্ছে রিকশা। ফলে কখনও কখনও ক্লাসে সঠিক সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
‘প্যাডেলচালিত রিকশা অমানবিক’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিলশাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের রাস্তা উঁচুনিচু। চৈত্র মাসের এ তীব্র গরমে রোজা রেখে পায়ে হেঁটে যাওয়া যেমন আমাদের জন্য কষ্ট, প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের জন্য আরও অনেক বেশি কষ্টসাধ্য।’ গতি নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
ক্যাম্পাসের রিকশাচালক বিপ্লব হোসেন (৪০) বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরে প্যাডেল-রিকশা চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। ভাড়া ধরাবাঁধা থাকায় অনেকেই আগের অটোরিকশার ভাড়া দেন। সারা দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে ছয় সদস্যদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। নিয়ম মেনে অটোরিকশা চালানোর অনুমোদন দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ক্যাম্পাসে প্রতি ঘণ্টায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের। চক্রাকার বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর জন্য দুবার রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য বরারব প্রস্তাবনা পেশ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল রনির।
রনি বলেন, ‘চক্রাকার বাস সার্ভিসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা চালুর প্রাথমিক রোডম্যাপ দেওয়া হলেও প্রসাশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রস্তাবনায় উল্লেখিত নীতিগুলো, যেমন—পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, লাইসেন্স প্রদান, রিকশাচালকদের জন্য আলাদা ইউনিফর্ম ইত্যাদি বিষয় বাস্তবায়ন করলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে কোনো সংকট থাকার কথা নয়।’
তিন মাস অতিবাহিত হলেও রিকশা সংকট সমাধান করতে না পারাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘মাথাব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলা যেমন কোনো সমাধান নয়, ঠিক তেমনি অ্যাক্সিডেন্ট হয় বলে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দেওয়াটাও কোনো সমাধান হতে পারে না। ক্যাম্পাসে বাইক, সাইকেল এমনকি পায়ে চালিত রিকশায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনা রোধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে প্রয়োজনে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে রিকশা চালু করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষার্থীদের চলমান ভোগান্তি কমবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিযুক্ত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো: নুরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি তিন মাস আগের হলেও আমি তখন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলাম না। আমি দায়িত্বে আসার পর এ বিষয়ে মিটিং করেছি। শিগগির একটা সিদ্ধান্তে আসব।’