‘জোর করে ক্লাস করিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়’, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সরকারি কে বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে জোর করে ক্লাসের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও হয়নি কাজ। ফলে প্রতিবাদী শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা করেছেন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা। সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। সেখান থেকেই জানানো হয় এ সব তথ্য।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভৈরব পৌরসভার সামনে শহীদ মিনার চত্বরে এ সব কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, সরকারি কে বি পাইলট হাই স্কুলে ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির তিনটি শাখা রয়েছে। ওই সব শাখায় ৬০ জন করে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ টাকা, আর পরীক্ষা ফি করা হয়েছে ৫০ টাকা। অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী, স্কুলটির মাসিক বেতন শুধু ১০ টাকা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, তারা অতিরিক্ত ক্লাস না করলে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্ট জমা না নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
অভিভাবকেরা জানান, সরকারি স্কুলে কম খরচে পড়াশোনা করাতে তাঁদের সন্তানদের অনেক প্রতিযোগিতা করে ভর্তি করিয়েছেন। এখন যদি অন্যান্য বেসরকারি স্কুলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ফি দিতে হয়, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
অভিভাবকদের অভিযোগ—অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার অসচ্ছল। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ওপর জোরপূর্বক অতিরিক্ত ক্লাস চাপিয়ে বেশি টাকা আয়ের ফন্দি করছে। এটা এক প্রকার জুলুম। তাঁরা এ জুলুম থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, কে বি পাইলট হাই স্কুল ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি স্কুলটি সরকারি স্কুল হিসেবে উন্নীত হয়েছে। ফলে এখানে খুবই স্বল্প খরচে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সাবেক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতায় স্কুলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অতিরিক্ত ক্লাসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ছাড়াও তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁরা এসব অনিয়মের তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরবে সরকারি কে বি পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনার কারণে আড়াই বছর ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটেছে। সে ঘাটতি পূরণের জন্য ও পড়াশোনার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে স্কুলের ক্লাসের বাইরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। এ ব্যবস্থা এজন্য করা হয়েছে, যাতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার মান ও রেজাল্ট ভালো হয়।’
অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য ৬০০ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এক্সট্রা ক্লাসের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে আমরা কম নিচ্ছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সপ্তাহে তিন দিন অতিরিক্ত ক্লাস করালে মাসে এক হাজার ২০০ টাকা ফি ধার্য করা যাবে। আর, আমি সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষার ফিসহ ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি। এর পরেও যদি কোনো অক্ষম অভিভাবক আমার কাছে আসেন এবং আমাকে অবহিত করেন, তাহলে আমি তা মওকুফ করে দেব।’
স্কুলের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি প্রধান শিক্ষককে বলেছি, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমাকে দ্রুত জানাতে।’