ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীর দাবিতে অবস্থান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের দাপ্তরিক কার্য সম্পাদনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অস্থায়ী কর্মচারীরা দুই দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন।
আজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ৩০১ নং কক্ষে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কার্যসম্পাদনের জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে (২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে এবং সিলেকশন কমিটির ভাইবা না নিয়েই বিভিন্ন পদে প্রায় অর্ধশত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী কর্তৃক অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত হয়ে তারা তাদের কাজ করতে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে কোন লিখিত বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে হঠাৎ করে মৌখিকভাবে তাদেরকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হলে তারা আজ এই কর্মসূচি শুরু করেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে অবস্থানকারীদের দুটি দাবি হলো- ১. অনতিবিলম্বে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের অস্থায়ী কর্মরতদের স্থায়ীকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ২. স্থায়ীকরণের পূর্ব পর্যন্ত No Work No Pay ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
অবস্থানরতদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করলেও ১১ জনের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। এখনো ৪২ জন প্রার্থী অস্থায়ীভাবে কাজ করছে। ওই ১১ জনের ন্যায় বাকিদের চাকরিও স্থায়ী করা হবে এমন আশায় তারা নামে মাত্র বেতনে কাজ করছেন। কিন্তু এখন তাদের চাকরি স্থায়ী করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
অবস্থানকারীদের একজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মৌখিকভাবে আমাদেরকে কাজে না আসার কথা বলা হয়েছে, কোন লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। আমরা চাই আমাদেরকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হোক, আমাদের দুই দফা দাবি মেনে নেওয়া হোক। এজন্য আমরা এখানে সকাল থেকেই অবস্থান করছি। আমাদের যে অফিসিয়াল দাবি-দাওয়া আছে সেগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্যারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
মো. সুমন মিয়া নামের একজন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ এখানে কর্মরত। ভিসি স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্যারের মাধ্যমে আমাদের এখানে নিয়োগ হয়েছে। ডিজিটালাইজেশন, বিভিন্ন সফটওয়্যার পরিচালনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিট ও শত বছরের আর্কাইভসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করেছি এবং যেটা এখনও চলমান। বিশেষ করে, অধিভুক্ত সাত কলেজের আন্দোলন চলাকালীন অবস্থা মোকাবিলা করতে জরুরিভাবে লোক নেওয়া হয়েছিল। নামে মাত্র বেতনে আমরা গত ৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি, কোনো সমস্যা নাই। এমনকি কোভিডের সময়ও আমরা নিয়মিত কাজ করেছি। আমাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল যে, আমাদের চাকরি ধীরে ধীরে স্থায়ী হবে। যেমন আগে আমাদের সিনিয়রদের হয়েছে। কিন্তু গতকাল হঠাই আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে।’
সুমন মিয়া আরও বলেন, ‘এখন আমাদের দাবি হচ্ছে, নো ওয়ার্ক- নো পে সিস্টেমে চাকরি চলমান এবং পরবর্তীতে বয়স ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি স্থায়ী করতে হবে, যেভাবে এর আগে আমাদের সিনিয়রদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই দুটি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অনশন চালিয়ে যাব।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ‘তাদেরকে মূলত অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এজন্য স্থায়ী করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূত ও অননুমোদিত কোনো কাজের সুযোগও নেই, সম্ভাবনাও নেই।’