শুরু হয়নি তদন্ত, উপাচার্যের নির্দেশে ফের রাবিতে নির্মাণকাজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের এক অংশের ছাদ ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি)। এতে ৯ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেদিন রাতেই জরুরি সভা ডেকে ওই ঘটনার কারণ নির্ধারণে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্যের নির্দেশে ফের শুরু হয়েছে ভবন নির্মাণের কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো চিঠি পায়নি। ফলে তারা এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না। অন্যদিকে তদন্ত শুরু না হতেই ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের ধসে পড়া অংশে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে এক পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে। ওই অংশ বাদে ভবনের অন্যদিকে খুঁটিনাটি বিভিন্ন কাজ করছেন শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক। এছাড়া ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যায়নি৷
চিঠির বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান সরকার জানান, ‘বর্তমানে তিনি রাজশাহীর বাইরে আছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত তার কাছে এ ধরনের কোনো চিঠি পৌঁছায়নি।’
কমিটির সদস্য মো. ইমরুল হাসান জানান, তিনিও কোনো চিঠি হাতে পাননি। আর তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের পক্ষ থেকেও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান বলেন, গত বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি৷ এরপর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এখনো অফিস শুরু করতে পারিনি। আগামীকাল সকালে অফিসে গিয়েই বিষয়টা দেখবো৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, রাবির শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল এবং একটি ২০তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ করছে রূপপুরের ‘বালিশকাণ্ড’ নিয়ে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এই দুটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলাকালে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও শ্রমিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।
অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে দেশজুড়ে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণের কাজ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল মজিদ অন্তর। তিনি বলেন, ওই ভবনে নানা অনিয়ম রয়েছে। আগেও একজন শ্রমিক মারা গেছে। সকল শ্রমিকদের সিকিউরিটি ও সেফটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কাজ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া তদন্ত চলমান অবস্থায় কাজ চলা আরও দুঃখজনক। এছাড়া এ ধরনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব দেওয়া উচিত৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যে জায়গায় ধসে পড়েছে সেদিকে কাজ চলছে না। অন্য জায়গায় উপাচার্য স্যারের নির্দেশে কাজ চলছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেখানে ধসে পড়েছে সেখানে নয়, আমি কাঠের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। নয়তো আমরা পিছিয়ে পড়বো। তবে কোনো ধরনের কন্সট্রাকশনের কাজ চলবে না।’