কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা খোলা : প্রধান বিচারপতি
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আদালতের দরজা তাদের জন্য সবসময় খোলা আছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আপিল বিভাগে অপর এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
আইনজীবীদের উদ্দেশে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনারাতো সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা, আপনাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে। যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে, তাদেরকে বোঝান, পরামর্শ দিন। আদালতের দরজা তো তাদের জন্য সবসময় খোলা।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তাদেরকে পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা সেটি গুরুত্বসহ শুনব।’
দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে জাতীয় সংসদকে ১৬ দফা পরামর্শ দেওয়া সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি আজ এসব কথা বলেন। শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দেশের স্বার্থে হাইকোর্ট দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সংসদকে পরামর্শ দিতে যাব কেন? আমরা কি সংসদকে পরামর্শ দিতে পারি? হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশনা দিতে পারেন।’
ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি চাইলে পরামর্শ দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি চাইলে সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, না-ও পারেন।’
এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সময় এ কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
এর আগে গতকাল সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং শিক্ষার্থীদের তিন দফা নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ।
নির্দেশনায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথমত, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে ফিরে যাবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর, শিক্ষকদের ক্লাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তৃতীয়ত, ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো বক্তব্য থাকলে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে বক্তব্য রাখতে পারবে, আমরা শুনব।’
হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারির আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যেহেতু হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়নি, তাই নিয়মিত আপিলে আমরা সব পক্ষের বক্তব্য শুনব, এখন স্থিতিশীল থাকবে।’
এর ফলে আপাতত ২০১৮ সালে কোটা বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী।