কেনো নিম্নমুখী কুমিল্লা বোর্ডের এইচএসসি ফলাফল?
আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে প্রকাশ করা হয়েছে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। গেলো ১৫ বছরের তুলনায় এ বছর বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফল নিম্নমুখী।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, চলতি বছর পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই ফলাফলে পাস এবং জিপিএ-৫ উভয় হারেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭০৭ জন। এর মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭৪৯ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী পেয়েছে ৯৫৮ জন।
প্রফেসর শামছুল আলম আরও জানান, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে এবার মোট ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী ৫৭ হাজার ৫২৪ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী ৪২ হাজার ৫২ জন। মোট পাস করেছে ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থী। মেয়ে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ৩০ হাজার ৭০১ জন, যেখানে ছেলে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১৭ হাজার ৯৫৬ জন। এতে মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে নোয়াখালী জেলা, যেখানে পাসের হার ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে, পাসের হার সর্বোচ্চ কুমিল্লা জেলায়, যা ৫২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবার শূন্য শতাংশ পাস করেছে নয়টি প্রতিষ্ঠানে, আর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি। শূন্যভাগ পাস করা নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টিতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা দশের নিচে ছিল।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজি ও আইসিটিতে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এছাড়াও উচ্চতর গণিতেও পাসের হার কম। তবে ইংরেজিতে সার্বিক পাসের হার ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। কেনো এই তিন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, সেই প্রশ্নটিই দিনভর আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
কুমিল্লা জেলার কয়েকটি কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকরা জানান, বেশিরভাগ কলেজে আইসিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আইসিটি বিষয়টি যুক্ত করার আগে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি, ফলে জোড়াতালি দিয়েই ক্লাস চলে এবং এতেই আইসিটিতে অকৃতকার্য বেশি হচ্ছে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন। তিনি জানান, এবার ১৬২টি ভেন্যুকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে কলেজগুলো আর ভেন্যুর সুবিধা নিতে পারেনি। এছাড়াও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ, সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো প্রকার চাপ না থাকার কারণে ফলাফল নিম্নগামী হয়েছে।
এদিকে, টানা ১৪ বার বোর্ড সেরা ফলাফল করার গৌরব অর্জন করা সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ছালেক মো. সেলিম রেজা সৌরভ জানান, বছরজুড়ে নিয়মিত পড়াশোনা, নমুনা পরীক্ষা নেয়া হলে যেকোনো পরিবেশেই ফলাফল ভালো হয়। আমাদের কেন্দ্র ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের ফলাফল ভালো ছিল। এছাড়াও সোনার বাংলা কলেজে রয়েছে আইসিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। সব মিলিয়ে ভালো ফলাফলে বছরজুড়ে লেখাপড়া, শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করা, পরীক্ষা নিলে ফলাফল ভালো হবেই এবং আমরা তাই করি।

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা