রাকসু নির্বাচন : ছাত্রদল–ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ঘিরে শেষ সময়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও দুপুরের পর পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুপুরের পর ভোটকেন্দ্রে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ এবং নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থীরা। উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন।
আজ দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
জাহিদ বলেন, “ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যাম্পাসে বসে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘জামায়াত অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বা বাইরে থেকে লোক ঢোকাচ্ছে,’ অথচ তিনি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা ভোটার নন। তিনি গুজব ছড়িয়ে রাকসুর পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।”
জাহিদ আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিরকুট নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও বাস্তবে একাধিক স্থানে তাদের সমর্থকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ঐক্য প্যানেলের অনেকে ১০০ গজের ভেতরে ঘোরাফেরা করেছে। চিরকুট বিতরণ করেছে, যা নিয়ম বহির্ভূত। তিনি জানান, ছাত্রদল নিয়ম তোয়াক্কা না করে খালেদা জিয়া হল ও হবিবুর রহমান হলের পাশে বুথ স্থাপন করেছে। বহিরাগত ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির অনেকেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে, যারা ভোটার বা প্রার্থী না হলেও ভোটকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
অপরদিকে, রাবির শহিদুল্লাহ ভবন ভোটকেন্দ্রে এক প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবির। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে ভোটগ্রহণ বন্ধ রেখে পোলিং অফিসার নিজ হাতে সিগনেচার করে ব্যালট পেপারে ভোট দিচ্ছেন। তা ব্যালট বক্সে ফেলছেন।’ আবিরের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী একজন অফিসার ১৫ থেকে ২০টি ব্যালটে সিগনেচার করতে পারলেও তারা নিজেরাই বিপুল ব্যালটে ভোট দিচ্ছেন।
আবির আরও অভিযোগ করেন, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের কিছু সদস্য নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শিবির-সমর্থিত প্রার্থী ও ভোটারদের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। অথচ তিনি নিজে ভিপি প্রার্থী হয়েও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে যদি এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ হয়, তবে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রে আস্থা নষ্ট হবে। তিনি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে অনিয়ম তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। যাতে শিক্ষার্থীরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পায়।
নির্বাচন ঘিরে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোটকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসের সংবেদনশীল কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।