বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফের’ বললেন রাবি শিক্ষক
নারী শিক্ষার পথিকৃৎ বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফের’ আখ্যা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান।
আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে সাজিদ হাসান নামের একজনের একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন— আজ মুরতাদ কাফের বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।
শিক্ষক মাহমুদুল হাসানের এ মন্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরমা পারমিতা বলেন, বেগম রোকেয়া উপমহাদেশের নারীশিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ ও প্রগতিশীল চিন্তার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। তিনি কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়েছেন— যেটি সব ধর্মই সমর্থন করে। একজন শিক্ষক হয়ে তাকে ধর্মীয় গালি দেওয়া শুধু অসম্মানজনক নয়, অন্যায়ও বটে।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এস এম আতিক মন্তব্য করেন, ৫ আগস্ট আমাদের বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এর সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকও এখন ফতোয়া দিতে পারেন।
রাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, সবারই নিজস্ব দর্শন থাকে, আর তার মাপকাঠিও আলাদা। তবে এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে না বলাই উত্তম বলে মনে করি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, বেগম রোকেয়া পুরো উপমহাদেশেই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত। যার নামে সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে ছাত্রী হল রয়েছে। নারী শিক্ষায় তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অথচ তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন মন্তব্য দুঃখজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সেই সঙ্গে তিনি যেমন সবার সামনে ফেসবুকে তাকে কাফের-মুরতাদ আখ্যা দিয়েছেন, আমি চাইব তিনি যেন সবার সামনেই এর জন্য ক্ষমা চান।
এদিকে সেই পোস্টের জেরে আজ বিকেলে পুনরায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে এক পোস্টে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, বেগম রোকেয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নাজিলকৃত কিতাব অস্বীকার করেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত অস্বীকার করেছেন, তাকে প্রতারক বলেছেন, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এত কিছুর পরে কোনো মানুষের ঈমান থাকতে পারে না।
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, আমার বক্তব্য একটু ফতওয়ার মতো মনে হচ্ছে। ফতওয়া দেওয়ার অধিকার আলেমদের, আমার না। এই জায়গায় অনধিকার চর্চা করেছি বলতে পারেন। ঈমান ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে যার মোটামুটি ধারণা আছে, তিনি কখনই এমন কাউকে ঈমানদার বলবেন না।
এ বিষয়ে জানতে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, এটা তার (ওই শিক্ষকের) ব্যক্তিগত মত। অনেকের কাছে এটি ভালো নাও লাগতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটি সমর্থন করি না।

আবু সাঈদ রনি, রাজশাহী (সদর-গোদাগাড়ী-পবা)