আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব : শাহজাহান ওমর
ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক বিএনপিনেতা ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব।’
আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কবিরকে পরিচয় করিয়ে দেন। নির্বাচনি মাঠে তাঁর সঙ্গে বিএনপির এই দুই নেতাসহ অসংখ্য নেতাকর্মী থাকবে বলেও জানান তিনি।
এরপর শাহজাহান ওমর সমাবেশে বলেন, ‘আমি এবং বিএনপির দলবলসহ আপনাদের মেহমান। আমাদের বরণ করে নিবেন। আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব।’
শাহজাহান ওমর সমাবেশে আরও বলেন, ‘কাঁঠালিয়া আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। এখানে তরুণ লীগ, কিবরিয়া লীগ, বুড়ালীগ ও বাচ্চা লীগ থাকতে পারবে না। এখানে থাকবে শুধু শেখ হাসিনা গ্রুপ।’
শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সবশেষে আগামী ১১ ডিসেম্বরের পর আবার দেখা হবে বলে জানান তিনি।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর এই প্রথম নির্বাচনি এলাকায় যান শাহজাহান ওমর। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন শাহজাহান ওমর। সমাবেশে শাহজাহান ওমরের বা পাশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন কবির হাওলাদার চেয়ারে বসা ছিলেন। অপরদিকে ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বসার বাদশা, শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগনেতা মো. মাহমুদ হোসেন রিপন।
শাহজাহান ওমর গত ২৯ নভেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান। ৩০ নভেম্বর তিনি গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ খবরে শাহজাহান ওমরকে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৩ ডিসেম্বর ঝালকাঠির রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
শাহজাহান ওমর কাঁঠালিয়ায় সমাবেশ করার পরই উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বিএনপির সাইনবোর্ড, ব্যানার ও ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এগুলো সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কবির বলেন, ‘আমি যে দলই করি না কেন, শাহজাহান ওমরকে পছন্দ করি। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্বাচন করব। তাঁর নির্বাচনি মাঠে থাকব বলেই সমাবেশে গিয়েছি।’ কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাকে নিয়ে মাঠে থাকব আমরা। শাহজাহান ওমর সাহেব আমাদের ডেকেছেন, আমরা তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী সভা করেছি। বিএনপির কেউ তাঁর সঙ্গে নির্বাচন করলে অসুবিধা কোথায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও প্রতীক বরাদ্দ হয়নি, তাই আমরা ছোট করে সমাবেশ করেছি। বড় সমাবেশ করলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়ে নিব।’
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শাহজাহান ওমর কাঁঠালিয়ায় গিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশের পরে তাঁর নির্দেশে আমাদের উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে সাইনবোর্ড, ব্যানার ও ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের সমাবেশের বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা শুনেছি তিনি সমাবেশ করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’