চাকরি প্রার্থীদের সিভি তৈরির কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
যেকোনো চাকরি প্রার্থীর প্রথম দর্শনের জন্য একমাত্র উপায় হলো তার সিভি। বিশ্বের বহুল পরিচিত জব পোর্টাল ইন্ডিড-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়োগকর্তারা প্রতিটি সিভি দেখার জন্য ৬ থেকে ১৫ সেকেন্ড সময় নেয়। অর্থাৎ ক্যারিয়ারে সফলতার পুরোটাই নির্ভর করছে সেই ৬ থেকে ১৫ সেকেন্ডের উপর। গ্রাজুয়েশনের পর সিভির আদ্যোপান্তের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না থাকলেও কিছুটা ঘাটতির জন্য প্রতিটি চাকরির আবেদন বিফলে যায়। তাই এই ফিচারটি আয়োজন করা হয়েছে সফল সিভি তৈরির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে।
আবেদনকৃত জবের অনুকূলে সিভি তৈরি
সিভি টেইলারিং-এর সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। কিন্তু এই অতি পুরোনো বিষয়টিতে এখনো চাকরি প্রার্থীরা গড়িমসি করেন। কিন্তু অধিকাংশ নিয়োগকর্তারা তাদের পোস্টের জন্য টেইলারিং করা সিভি আশা করেন। একটি সাধারণ সিভিতে দেয়া তথ্যাবলির সাথে জব পোস্টটির বিষয়গুলো কখনোই ১০০ ভাগ মিলে যায় না। তাছাড়া এমনো অনেক তথ্য থাকতে পারে যেগুলো অন্য কোন জবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে সেই সিভির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সেই জবের অনুকূলে সিভি তৈরি করতে হলে জবটির কাজের ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এগুলো সার্কুলারেই বিশদভাবে উল্লেখ থাকে। দায়িত্বের বিবরণী অনুসারে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এমনকি ক্যারিয়ারের লক্ষ্যও সাজিয়ে নেয়া যেতে পারে।
আকর্ষণীয় সিভি তৈরি
এক নজরে হাজার হাজার সিভি দেখার সময় কোনো একটা সিভিতে চোখ আটকে যেতে হলে সেই সিভিটির অন্য সিভি থেকে আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর জন্য এক থেকে দুই পৃষ্ঠার ভালো ফরম্যাটের একটা সিভিই যথেষ্ট। এই ভালো ফরম্যাট মানে সিভিটির মার্জিন, প্রতিটি সেকশনের মাঝে ফাঁকা জায়গা, পড়ার জন্য উপযোগী ফন্ট, অক্ষরগুলো আকার, প্রতিটি সেকশনে দেয়া তথ্যগুলো বিন্যাসের ধরনকে বোঝানো হয়।
প্রতিটি লেখা লেফট অ্যালাইন হতে হবে আর চতুর্পাশে যথেষ্ট খালি জায়গা রেখে পুরো পৃষ্ঠাটিকে এমন করতে হবে যেন দেখে মনে হয় পুরো সিভিটি একটি চতুর্ভূজের ভেতরে আবদ্ধ আছে। ফন্টগুলোর জন্য স্যান্স-শেরিফ ক্যাটাগরির এরিয়েল অথবা সেরিফের টাইম্স নিউ রোমান নির্বাচন করা যায়। অক্ষরগুলোর ক্ষেত্রে যদি সেকশন টাইটেল হয় তবে আকার ১৪ থেকে ১৬ আর যদি সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে ১২ হলেই চলবে। ফাঁকা জায়গার ক্ষেত্রে প্রতিটি সেকশনের পর একটি স্পেস-ই যথেষ্ট।
এবার আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে সেকশন আর সেকশনে দেয়া তথ্যগুলোকে দুটি কলামে অথবা এক ও দুই কলাম মিলিয়ে সুবিন্যস্ত করে সাজানো যেতে পারে।
স্পষ্ট সময় উল্লেখ
অভিজ্ঞতায় প্রতিষ্ঠান ও পদবী লেখার সময় অনেকেই সময় বিশেষ করে কমপক্ষে সালটাও উল্লেখ করেন না। প্রতিটি তথ্যের সাথে সময় উল্লেখ করলে সিভির পরিবেশনের পাশাপাশি মানও উন্নয়ন হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতায় পাশের বছরের মত করে পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রম ও ট্রেনিংয়ের সাল যোগ করলে নিয়োগকর্তারা আবেদনকারীর ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পান।
অনেকে বেকারত্বের সময়টা গোপন করা অথবা জব পরিবর্তনের মাঝের সময়টা আড়াল করার জন্য বছর উল্লেখ করেন না। সেক্ষেত্রে নতুন জব শুরু করার আগের সময়টা ৯টা থেকে ৬টা কি কি উৎপাদনশীল কাজে লাগানো হয়েছে তা উল্লেখ করা যায়।
উপযুক্ত তথ্য প্রদান
এই বিষয়টি কিছুটা আবেদনকৃত জবের অনুকূলে সিভি তৈরির সাথে সম্পৃক্ত। খেয়াল রাখতে হবে এখানে কিন্তু সত্য-মিথ্যার কথা বলা হচ্ছে না। যেমন অভিজ্ঞতায় ‘পরিশ্রমী ও টার্গেট পূরণ করা সেল্সম্যান’ এর বদলে ‘২০২৪ সালের জুন মাসের মাসিক আয় এপ্রিলের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি’ কথাটি উত্তম। সফট স্কিলের ক্ষেত্রেও শুধু স্কিলটির নাম উল্লেখ না করে উচিত কোত্থেকে কি কাজের মাধ্যমে স্কিলটি অর্জিত হয়েছিলো।
সিভির শিরোনাম ও প্রাসঙ্গিক শব্দ সংযোজন
এটি বাংলাদেশের জন্য সিভি তৈরির একটি নতুন ধরণ হলেও অনলাইনে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে খুবই দরকারি। লিংকডিনের প্রোফাইলের মত কাগজের সিভিতেও নামের নিচে শিরোনাম বা পদবী লেখা উচিত। এটা চট-জলদি চাকরি প্রার্থীর ব্যাপারে নিয়োগকর্তাকে একটা ধারণা দেয়।
তাছাড়া অনলাইনে নিয়োগকর্তারা যখন তাদের কাঙ্ক্ষিত পোস্টের জন্য পদবী দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের খোঁজ করেন, তখনো এই শিরোনামটি সাহায্য করে।
প্রাসঙ্গিক শব্দ বা কী-ওয়ার্ড সংযোজনে অনলাইন সিভিটি সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজ্ড হয়ে যায়। অর্থাৎ সিভিতে নির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতা সম্বলিত যথেষ্ট কী-ওয়ার্ড থাকলে, যে কেউ সার্চ করলে সেই সিভিটি পেয়ে যায়।
উপরোক্ত পাঁচটি টিপস একটি সফল সিভি তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। তবে এর পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং-এর প্রয়োজন আছে। সিভিটি সঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা তার জন্য বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মীদের সাথে উত্তরোত্তর যোগাযোগের সম্পর্ক রাখা অতীব জরুরি। তবেই একটি সুন্দর সিভি তৈরি সফলতার শিখড়ে পৌঁছতে পারে।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)