গাজরের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করল বাকৃবি
উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দেশি ও বিদেশি ৮০টি জাতের গাজর নিয়ে করা এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ। ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড), ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) যৌথ অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬টি ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৪টি জাতের গাজর নিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে।
গবেষক দলের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে গাজরের হেক্টরপ্রতি ফলন গড়ে ১০ টন হলেও গবেষণায় উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল গাজরগুলো থেকে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টন ফলন পাওয়া যাবে। এছাড়া গাজরগুলো দেশের উষ্ণ ও খরাপ্রবণ অঞ্চলেও চাষের উপযোগী।
গাজরের উচ্চ ফলনশীল এসব জাত সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ৭০ থেকে ৮০ দিনেই গাজরগুলোর ফলন পাওয়া যাবে। এক একটি গাজরের ওজন প্রায় দুইশ থেকে আড়াইশ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
হারুন অর রশিদ বলেন, গাজরগুলো দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন খরাপ্রবণ এলাকা যেমন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা, লালমনিরহাট ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে চাষ করে সফলতা পেয়েছি। তা ছাড়া, যেসব অঞ্চলে আলুর ফলন বেশি হয়, সেখানে এসব গাজরের চাষ কৃষকদের ভাগ্য বদলাতে সাহায্য করবে।
দেশে শুধু কমলা রঙের গাজর পাওয়া গেলেও লাল, সাদা, হলুদ ও বেগুনি রঙের বিভিন্ন জাতের গাজর দেশে চাষ উপযোগী করা হয়েছে। লাল ও বেগুনি রঙের হওয়ায় গাজরগুলোতে ভিটামিন এ, অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি বলেও জানান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া গাজরের বীজ উৎপাদনের উপযোগী না হওয়ায় প্রায় ৯৯ শতাংশ বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি করা প্রতি কেজি বীজের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আমদানিকৃত বীজের অধিকাংশ সংকরায়িত বা হাইব্রিড জাতের হওয়ায় উৎপাদিত গাজর থেকে পুনরায় বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে এ অধ্যাপক হারুন বলেন, উচ্চ ফলনশীল গাজরের জাতগুলো থেকে বীজ তৈরির কাজ চলছে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গাজরগুলো উচ্চ ফলন দেওয়ায় গাজরগুলো থেকে বীজ তৈরি সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
বীজ তৈরি হলে কৃষকের হাতে স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ।