মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ট্রাম্প শুরু থেকেই ভুল করেছেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল প্রথম, দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ তৃতীয় বিতর্কে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। সেদিক দিয়ে ডোমাক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন মাত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সহধর্মিণীর মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে আর কোনো বাধা আছে বলে মনে হয় না। যদি অলৌকিক কোনো নাটকীয় ঘটনার জন্ম না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ সর্বপ্রথম তাঁদের দেশের জন্য নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প একটা জিনিস সম্ভবত ভুলে গেছেন যে আমেরিকার সামাজিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় গঠন। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক মূল্যবোধ হলো, সব ধর্ম-মত-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমন্বয় ও একতা। আর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কাঠামো হলো, আমেরিকা কোনো বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের জনগণের রাষ্ট্র নয়। এটা হলো ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীদের দেশ। বৈধ অভিবাসীরা সেখানে স্থানীয়দের মতোই সুযোগ-সুবিধা পান, তারাও দেশটির সম্মানিত নাগরিক। সেদিক থেকে ট্রাম্প বারবার ভুল করেছেন, যেমন ধরুন—আফ্রিকান, এশিয়ান ও সর্বশেষ মুসলমানদের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রিক কাঠামোগত মূল্যবোধ এবং তাদের যে সামাজিক মূল্যবোধ তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ব্যাপারটা মার্কিনিরা কখনো সহজভাবে নেবে না। এটা হলো প্রথম কথা।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো নির্বাচনে মূল বিষয় হলো বহু সংস্কৃতিকে ধারণ ও স্বীকার করতে পারা। এটা স্বীকার করতে পারলে মার্কিন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই জায়গায় ট্রাম্প ভুল করছেন খুব বেশি। এরপর ট্রাম্প নারীদের নিয়ে যেসব কথা বলছেন, সেগুলো স্পষ্টই নারীবিদ্বেষী কথাবার্তা। এসব কারণে এই নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যেতে পারেন। আসলে ট্রাম্পকে সবাই প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছেন। এমনকি বুশের বাবা সিনিয়র বুশও বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না এবং ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও তাদের অনেক পত্র-পত্রিকা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এসব হিসাব মেলালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।