বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আজ রোববার এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, করোনায় ঢাবির কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। কিন্তু করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট এবং হতাশায় বিষাদগ্রস্ত হয়ে ঢাবির ১১ জনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষার সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের মৃত্যু ঘটেছে, অপমৃত্যু ঘটেছে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে।’
সমাবেশে ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘গার্মেন্টস খোলা আছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা আছে, গণপরিবহণ চালু আছে, শপিংমল খোলা আছে, সবই খোলা আছে। উৎসব হচ্ছে, আয়োজন হচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ কেন? শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু এই সরকারের কাছে শাসন হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। শাসনের জন্য সরকার সবই করতে পারে, কিন্তু শিক্ষার জন্য করবে না। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখা যাবে। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারবে না। এটা ছাড়া আর কোনো কারণ দেখি না। আমার মনে হয়, সম্ভব হলে তারা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বন্ধ রাখবে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফারসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে আর একটি দেশও পাবেন না যেখানে ছাত্ররা ক্লাস করতে চায়। আমাদের দেশের ছাত্ররা এর জন্য সংগ্রাম করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু নোটিশ দেওয়া, নতুন নতুন তারিখ ঘোষণা করা। ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে যাওয়া-আসা করেছে, সীমান্ত দিয়ে এখনও মানুষ আসছে।’
‘হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দাও’ আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাবির ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর চাকরি ও টিউশন নেই। অপরদিকে একটি দৈনিক পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, গত পাঁচ মাসে প্রায় ৩৯ জন ঢাবি শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ঢাবি ক্যাম্পাসেই শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাই এসবের জন্য দায়ী।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, “আমরা সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে স্মারকলিপি নিয়ে গেলে তিনি আমাদের ‘বিকারগ্রস্ত’ বলেন। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা করছি, ক্যাম্পাস খোলা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। যতদিন না হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা সেখানে প্রতিবাদী গান ও কবিতা পাঠ করেন।