শেষ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প, শঙ্কায় বাইডেন
মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণা প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে আড়াই কোটির মতো আগাম ভোটও পড়েছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় শিবির থেকেই বলা হচ্ছে, ২০২০ সালের এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে ভোটারদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কিন্তু এখনো অনেক ভোটার সিদ্ধান্ত নেননি কাকে ভোট দেবেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই প্রার্থীই চেষ্টা করছেন, সিদ্ধান্তহীন এসব ভোটারকে নিজের পক্ষে টানতে। তবে তরুণদের অনেকেই রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে পছন্দ করেন না। এমন সব ভিন্ন ভিন্ন কৌতূহলের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের মার্কিন নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই সবচেয়ে আলোচিত একটি প্ল্যাটফর্ম। তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, নাকি হচ্ছেন না; এমন চিন্তাই সবাইকে গ্রাস করেছে। গত চার বছরে ট্রাম্পের সব নেতিবাচক ভূমিকা এবং ব্যক্তি-আচরণ এখন সামনে উঠে আসছে। এরই মধ্যে দেশটির প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্প হেরে যাবেন বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগই জো বাইডেন সম্পর্কে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়ে চলেছে। শুধু গণমাধ্যমে নয়, নিজ দলের ভেতরেই ট্রাম্পের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। নানা কারণে বিশ্বের সাধারণ মানুষও ট্রাম্পের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। এখন প্রশ্ন রয়েছে, এত কিছুর পরও কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার নির্বাচিত হবেন?
তবে এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, চার বছর আগেও মার্কিন নির্বাচনে জনমত জরিপে ট্রাম্প পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত নির্বাচনের ফলাফলে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। তুমল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও হিলারি সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি। তাহলে এবারও কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে? এ কথা ঠিক যে এবার যদি জনমত জরিপ মিথ্যা হয়, তাহলে মার্কিন নির্বাচনে জনমত জরিপের গুরুত্ব আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের ভোটেই (পপুলার ভোট) কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তাঁকে অর্ধেকের বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। এ নির্বাচনে যেমন বাইডেন, তেমনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন তখনকার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তিনি ট্রাম্পের চেয়ে পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হেরেছিলেন প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়ে।
ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান হোয়াইট হাউসে যেতে এবার এ রাজ্যগুলোকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এ রাজ্যগুলোকে বলা হচ্ছে সুইং স্টেট, যেখানে এককভাবে কোনো দল জনসমর্থনে এগিয়ে নেই। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এ ছয়টি রাজ্যেই হিলারিকে হারিয়ে জিতেছিলেন ট্রাম্প। যদিও জাতীয় জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন হিলারি। ওই নির্বাচনে হিলারির এগিয়ে থাকার জনমত জরিপ এবং ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি এবারও বিশেষভাবে দেখছে ডেমোক্র্যাট শিবির। জরিপে যেভাবে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন, বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলোতে, তা দেখে সমর্থক ও মাঠপর্যায়ের কর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোট না দেওয়া পর্যন্ত সমর্থকদের সুইং স্টেটগুলোর জরিপ নিয়ে উৎসাহী না হতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস অবশ্য হিসাব কষে বলছে, রাজ্য ধরে ধরে করা তাদের জনমত জরিপ যদি চার বছর আগের মতো ভুলও হয়, তবুও বাইডেন জয়ী হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী ভোটারদের মধ্যে জনমত জরিপেও পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। প্রবীণ শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে তিনি। আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে যারা হিস্পানিক, তাদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম। ফলে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পকে বেশি উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প যে করেই হোক, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে জিততে চান। গত কয়েক মাসে তাঁর তৎপরতা, কথাবার্তা, চলাফেরা ও আচরণে এক বিশেষ অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। এ অস্থিরতার মূল কারণ, কীভাবে নির্বাচনের ফল হাতের মুঠোয় আনা যায়। নিজের পক্ষে ভোট টানতে যখন যা মনে হচ্ছে তা-ই করছেন ট্রাম্প। কিন্তু আদৌ নির্বাচনের ফল ট্রাম্পের পক্ষে আসবে কিনা, সেটি নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনের ১৩ দিন বাকি। এ সময়ে এসে একটি শঙ্কা বাইডেনের ডেমোক্র্যাট বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হলো, চার বছর আগে নির্বাচনের ঠিক ১১ দিন আগের ই-মেইল কেলেঙ্কারি। ওই সময়ে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির ঘটনা মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। এবারও নির্বাচনের আগেও এমন শঙ্কা ডেমোক্র্যাটরা অনুভব করছে।
ফল নিয়ে হয়তো চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন এই নির্বাচনটিতে যথেষ্ট নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে, সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এই নাটকীয়তা উপভোগ করতে বিশ্ববাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েকটা দিন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়