গ্রামের ঈদ আনন্দ

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন পবিত্র ইদুল ফিতর পালন করা হয়। আর গ্রামে ঈদের আনন্দ অন্য এক অনুভূতি। রমজান মাসের শেষের দিনগুলো গ্রামের ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দ বইতে থাকে।
অতি সাধারণ জীবনযাপন করে থাকেন গ্রামের মানুষ। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব তারা মিলেমিশে উদযাপন করে থাকেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। এসব গ্রামীণ মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিভেদ কম থাকে। উৎসবসহ যেকোনো আয়োজনে গ্রামের পাড়ার প্রতিবেশিরা একসঙ্গে আনন্দ করেন।
গ্রামের বাজারগুলোতে নতুন পোশাক কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড় থাকে। চাঁদ রাত থেকেই শুরু হয় ঈদ উৎসব। ঈদের আগের দিন রাতে বিভিন্নভাবে ঈদকে স্বাগত জানায় গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। গ্রামের ছোট ছোট হাট বাজার, পাড়া মহল্লায় আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ করেন গ্রামের ছেলেরা। ঈদের দিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঈদ আনন্দে মেতে উঠে সবাই। দল বেঁধে গোসলে করে গ্রামের তরুণ যুবক থেকে শুরু করে বয়স্করা। গোসল শেষে ঈদগাহে যায় সকলে। গ্রামের সকল বয়সের মানুষ কাধে কাধ রেখে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সবাই কোলাকুলি করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে থাকেন। ছোটরা বড়দের সালাম করে সালামি নেয়।
এদিকে, সকাল থেকেই গ্রামের ঘরে ঘরে রান্না করা হয় সেমাই, ফিরনি ও পায়েস। ঈদের নামাজ শেষ করে সকলেই এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ছুটে যায়। সবাই মিলে একসঙ্গে বসে আনন্দ গল্পে খাওয়া-দাওয়া করেন। গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় সালামি। সালামির পরিমাণ যাই হোক। সালামিতে পেতে এক ভিন্ন আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। এভাবে বাড়িতে বাড়িতে কাটে ঈদের সকাল।
গ্রামের ইদের আনন্দ বেশি থাকে শিশু কিশোরদের মধ্যে। নতুন পোশাক পড়ে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় তারা। শিশু-কিশোররা সালামির টাকা জমিয়ে একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায় এবং গ্রামের দোকানের চিপস, কোমল পানীয় তাদের পছন্দের খাবার। ঈদে শিশুদের খেলনার তালিকায় থাকে খেলনা পিস্তল, পুতুল, লাটিম ও গাড়িসহ বিভিন্ন খেলা। অনেকেই আবার ঘড়ি ও চশমা কেনেন। সেই ঘড়ি হাতে এবং চশমা চোখে দিয়ে দিনভর ঘুরে বেড়িয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে তারা।
গ্রামের কোথাও কোথাও আয়োজন করা হয় ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা। এতে কয়েক গ্রামের মানুষ জড়ো হয় ঘোড়ার দৌড় দেখতে। যার বেশির ভাগই থাকেন শিশু-কিশোররা। শহরে থাকা অনেকেও আসেন ঘোড়ার দৌড় দেখেতে। আবার বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় তৈল মাখা কলা গাছে ওঠা, বালিশ খেলা ও হাঁস ধরার প্রতিযোগিতা। এসব আয়োজনেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠে গ্রামের ঈদ। গ্রামে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র থাকে না। তাই ঈদ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা, গ্রামীণ হাট বাজার।
দুপুরে বাড়িতে বাড়িতে খাবারের আয়োজন করা হয়। আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশি বন্ধু-বান্ধবদের দাওয়াত দেওয়া হয়। অনেক দিন পর একসঙ্গে খাওয়ার এক অন্যরকম স্বাদ। আড্ডা গল্পের সবাই একসঙ্গে খাবার খান।
ঈদের দিন বিকেল থেকেই গ্রামের বাজারগুলোতে ভিড় করতে থাকেন ছোট-বড় সকলেই। বাজারের ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোতে বসে ঈদ আনন্দ মেলা। চায়ের চুমুকে চুমুকে চলে ঈদের আড্ডা। গ্রামের যেসব মানুষ শহরে চাকরি করেন তারা ঈদের দিন তাদের বাল্য বন্ধুদের খুঁজে বের করে আড্ডায় হারিয়ে যান শৈশবে। এ আড্ডা চলে অনেক রাত পর্যন্ত। রাতেও থাকে বাড়িতে বাড়িতে খাবার আয়োজন। দাওয়াত দেওয়া হয় প্রিয়জনদের। সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে থাকেন।
গ্রামের ঈদে নতুন মাত্রা যুক্ত করে বিয়ের অনুষ্ঠান। সাধারণত ঈদের পরদিন গ্রামীণ বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। সাধারণত যারা শহরে চাকরি করেন, তারা তেমন ছুটি পায় না। তাই ঈদের ছুটিতেই বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়। সেসব বিয়েতে অনেকেই ঈদের পোশাক পরিধান করে থাকেন। যে কারণে ঈদের রেশ থেকে যায় কয়েকদিন পর্যন্ত। সকলেই একসঙ্গে নেচে গেয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। এ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে।
লেখক : অনলাইন করেসপন্ডেন্ট, পটুয়াখালী (বাউফল-দুমকি)